দেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হাজীগঞ্জ। পৌরসভায় ঢুকতে হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কে দেখা মিলবে একটি তোরণ। সেখানে লেখা আছে ‘স্বাগত হাজীগঞ্জ পৌরসভা’। অপরদিকে, পৌরসভা থেকে কচুয়ার পথে বের হওয়ার সময় দেখতে পাবেন আরেকটি তোরণ। সেখানে লেখা রয়েছে- ‘ধন্যবাদ হাজীগঞ্জ পৌরসভা’।
এ স্বাগত ও ধন্যবাদ লেখা সজ্জিত তোরণের নিচে যদি ভুলক্রমে হলেও আপনার চোখ যায়, দেখতে পাবেন শুধু ‘ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়’। কৌতুহলবশত হলেও আপনার কাছে তখন মনে হবে, পৌরসভার ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ই যেন আপনাকে স্বাগত ও বিদায় জানাচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা রাখার ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের এই পৌরসভাটি।
পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন মহল্লা থেকে প্রতিদিন ভ্যানে করে বর্জ্য-ময়লা-আবর্জনা এনে সড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। একইসঙ্গে হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কে পথচারী-শিক্ষার্থী ও যানবাহনের হাজারো যাত্রীকে চলাচল করতে হচ্ছে দুর্গন্ধ নিয়ে। মাঝে মাঝে এসব ময়লা-আবর্জনা নষ্ট করার জন্য আগুন জ্বালানো হয়। তখন অস্বাস্থ্যকর কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায় স্থানীয়রা।
শুধুমাত্র এ সড়কেই নয়, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজের মুখে সড়কের দুই পাশে প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে দূষণের শিকার হচ্ছে নদীর পানি।
ময়লার কারণে ভরাটপ্রায় সড়কের পাশের জলাশয়গুলোও। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভার চতুর্মুুখী ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে দূষিত হচ্ছে চারপাশের পরিবেশ। এ ধরণের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জনগণ।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, পৌরসভার বর্জ্য-ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে আমরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি। অভিযোগ দেওয়ার পরও পৌরসভা আমাদের কোনো কথা শুনে না। তাদের খেয়াল-খুশিমতো মহাসড়কের আশপাশ ও জলাশয়ে আবর্জনা ফেলার কারণে স্থানীয়দের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভার নিজস্ব কোনো ডাম্পিং স্টেশন নেই। পৌর এলাকা ও বিভিন্ন হাটবাজারের প্রায় ৩০ টনের মতো দৈনিক বর্জ্য সংগ্রহ করে হাজীগঞ্জ পৌরসভা। পাশাপাশি পৌর বাসিন্দাদের ২০ টনসহ মোট ৫০-৬০ টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নির্দিষ্ট কোনো স্থান নাই। ফলে ময়লাগুলো ফেলা হচ্ছে চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের মিঠানিয়া ব্রিজের উত্তরপূর্ব পাশে। এছাড়াও হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের ডাকাতিয়া ব্রিজের পাশে, হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কের রেলগেট এলাকা এবং হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের উত্তর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ময়লা ফেলতে দেখা যায়।
হাজীগঞ্জ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) মাহবুবুর রশীদ বলেন, আমাদের কোনো ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ করা হয়নি। এটা নির্মাণের জন্য পৌরসভার মালিকানাধীন জমি প্রয়োজন। আমাদের সেটা নেই।
৫-৬ বছর ধরে এভাবেই সড়কের আশপাশে ও জলাশয়ে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে বলে জানান এই প্রকৌশলী। সাবেক পৌর মেয়রগণ এ ব্যবস্থা করে গেছেন। আমাদের বিকল্প কোনো উপায় এখনো তৈরি হয়নি বলে যোগ করেন তিনি।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, খুব শিগগিরই বর্জ্য পরিশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বিকল্প জায়গার বন্দোবস্ত না হওয়া পর্যন্ত পৌরসভার ময়লা এসব স্থানেই ফেলতে হচ্ছে।
সাময়িক সময়ের জন্য পৌরবাসীকে একটু কষ্ট হলেও সঠিক স্থানে ময়লা ফেলার আহ্বান জানান তিনি।