শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সংস্কার কাজ শেষ না হতেই বাঁধে ফাটল, আতঙ্কে ঝিনাইগাতীর মানুষ  

আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ২০:৪২

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শেষ না হতেই বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে বাঁধপাড়ের শত শত মানুষ আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন। বাঁধ নির্মাণ কাজে ধীরগতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির প্রবাহে মহারশি নদীর বিভিন্ন স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়। এসব বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ এলাকা দিয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করে কয়েক শত ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। এতে গৃহহীন হয়ে পড়ে ১ হাজারের বেশি মানুষ। এর মধ্যে সিংহভাগ গৃহহীন পরিবার তাদের বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি সংস্কার করতে সক্ষম হলেও অনেকেই তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর সংস্কার করতে পারেননি। 

অপরদিকে গত বছর মহারশি নদীর বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর পূর্ব পাশে বিভিন্ন স্থানে ২১৬০ মিটার ও পশ্চিম পাশের বিভিন্ন স্থানে ১৩৪০ মিটার কাজ হাতে নেয়। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত দুই মাস পূর্বে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ শুরু করে। তবে নির্মাণ কাজ চলছে ধীরগতিতে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 

স্থানীয়দের মতে, যে কাজে সময় লাগার কথা ১ সপ্তাহ তা দুই মাসেও শেষ হয়নি। কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফলে আকাশে মেঘ দেখলেই মহারশি নদীর বাঁধের পাড়ের মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হয়। এছাড়া মাটি দিয়ে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ সংস্কারের কথা থাকলেও বালু ও মাটি মিশ্রিত বালু দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারের সঙ্গে মাটি দেওয়ার চুক্তিবদ্ধ হওয়া। কিন্তু প্রভাবশালী মহল বাঁধ নির্মাণ কাজের অজুহাত দেখিয়ে মহারশি নদীর পাড় কেটে ও নদী থেকে অবাধে বালু লুটপাট চালিয়ে আসছে। এক ট্রাক বালু রাস্তায় দেওয়া হচ্ছে। আর ৫০ মাহিন্দ্র বালু বিক্রি করা হচ্ছে। 

অভিযোগ রয়েছে বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস পাচ্ছেন না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে বাধা দেওয়া হলেও মানছেন না বালু লুটপাটকারিরা। নদীর পাড় কেটে অবাধে বালু লুটপাটের ফলে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পরেছে নদীর পাড়। হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। 

এ বিষয়ে ঠিকাদার মিলন মিয়া বলেন, আমাদের সঙ্গে মাটি দেওয়ার চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন স্থানীয়রা। তারা কোথা থেকে মাটি দিবেন সেটা তাদের বিষয়।  

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখিনুজ্জামান বলেন, বাঁধ নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বালু সরিয়ে মাটি দেওয়ার পর আবার নতুন করে কাজ শুরু করা হবে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি বারবার বাধা দেওয়া হয়েছে। এরপরেও নদী থেকে মাটি ও বালু উত্তোলন করা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইত্তেফাক/এমএএস