সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

তুরস্কের কফি, চকলেট, ফ্যাশন সামগ্রি বয়কট করছে ভারতীয়রা

আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ১১:১৪

পাকিস্তানের প্রতি তুরস্কের প্রকাশ্য সমর্থনের পর তুর্কি পণ্যের বিরুদ্ধে ভারতে শুরু হয়েছে ব্যাপক বয়কট। এর জেরে দেশজুড়ে কসমেটিকস, পোশাক, চকলেট, কফি ও অন্যান্য তুর্কি পণ্য বিক্রি বন্ধ করছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এমনকি ছোট ছোট মুদি দোকান পর্যন্ত এই বয়কটে শামিল হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

সম্প্রতি ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পেহেলগামের জঙ্গি হামলার পাল্টা জবাবে পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালায় ভারত। এ ঘটনার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান প্রকাশ্যে পাকিস্তানের প্রতি সংহতি জানান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে তুরস্কের এই অবস্থান ভারতীয়দের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় অল ইন্ডিয়া কনজ্যুমার প্রোডাক্টস ডিস্ট্রিবিউটরস ফেডারেশন, যারা এক কোটি তিন লাখের বেশি মুদি দোকানে পণ্য সরবরাহ করে—তুরস্কের সব পণ্যের ওপর ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পূর্ণ বয়কট’ ঘোষণা করেছে। ফলে চকলেট, ওয়েফার, জ্যাম, বিস্কুট ও স্কিনকেয়ার সামগ্রির মতো তুর্কি পণ্যগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে দোকানগুলো থেকে।

অনলাইন খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। ফ্লিপকার্ট এবং রিলায়েন্সের মালিকানাধীন ফ্যাশন প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের সাইট থেকে একের পর এক তুর্কি ব্র্যান্ড সরিয়ে ফেলছে। যেমন ফ্লিপকার্টের সহযোগী মিন্ত্রা তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন্ডিওল, এলসি ওয়াকিকি ও মাভি’র মতো জনপ্রিয় তুর্কি পোশাক ব্র্যান্ডগুলো বাদ দিয়েছে। মিন্ত্রার একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘জাতীয় স্বার্থে’ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তবে এতে ফ্লিপকার্ট বা ওয়ালমার্টের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

রিলায়েন্সের ওয়েবসাইট ‘আজিও’তেও একই প্রবণতা দেখা গেছে। সেখানেও ট্রেন্ডিওল, কোটন ও এলসি ওয়াকিকির মতো ব্র্যান্ডগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সোমবার এসব ব্র্যান্ডের অনেক পণ্যের তালিকায় ‘স্টক শেষ’ লেখা দেখা গেছে।

রয়টার্স জানায়, ফ্লিপকার্ট, রিলায়েন্স রিটেইল কিংবা সংশ্লিষ্ট তুর্কি ব্র্যান্ডগুলোর কেউই তাদের মন্তব্য চাওয়ার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।

তবে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কের পণ্য বয়কটের কোনো ঘোষণা দেয়নি। দেশটি প্রতিবছর তুরস্ক থেকে প্রায় ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে, যার বেশিরভাগই খনিজ জ্বালানি ও মূল্যবান ধাতু। তবুও ভোক্তাদের এই স্বতঃস্ফূর্ত বয়কট অর্থনৈতিক দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। কনজ্যুমার ফেডারেশনের মতে, তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রায় ২ হাজার কোটি রুপি মূল্যের খাদ্য পণ্যের বাজারকে প্রভাবিত করবে।

ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে তুরস্ক থেকে আমদানি করা পোশাকের মূল্য ছিল প্রায় ৮১ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে ভারতের হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুক্কু জানিয়েছেন, তিনি তুরস্ক থেকে আপেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব বিবেচনা করছেন। শুধু ২০২৪ সালেই এই আমদানির পরিমাণ ছিল ৬০ মিলিয়ন ডলারের মতো।

বয়কটের ঢেউ পর্যটন খাতেও পড়েছে। ফ্লিপকার্ট ইতোমধ্যে তুরস্কগামী ফ্লাইট, হোটেল এবং প্যাকেজ বুকিং বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, এটি ভারতের জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত।

এছাড়া অনেক ভারতীয় তুরস্ক সফরের পরিকল্পনা বাতিল করছেন। এমনকি দিল্লিভিত্তিক তুর্কি বিমান পরিষেবা প্রতিষ্ঠান সেলেবির নিরাপত্তা ছাড়পত্রও বাতিল করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/টিএইচ