শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা, বাদী চেনেন না আসামিকে

আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ২০:২২

নেত্রকোনার কেন্দুয়া থানায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি নাশকতা মামলায় ইত্তেফাকের কেন্দুয়া উপজেলা সংবাদদাতা জিয়াউর রহমানকে আসামী করা হয়েছে। এই নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।

সোমবার (২৬ মে) দায়ের করা মামলাটির বাদী কেন্দুয়া উপজেলা মোজাফফরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা শ্রমিক দলের বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সবুজ মিয়া। মামলার এজাহার  উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. আসাদুল হক ভূঁয়াকে প্রধান আসামি করে ১৯৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৩০০ জনকে। মামলায় ৭২ নম্বর আসামি করা হয় ইত্তেফাকের কেন্দুয়া সংবাদদাতা জিয়াউর রহমানকে। 

পৌর শহরের কুণ্ডলী এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ইত্তেফাক পত্রিকায় কেন্দুয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন।  কেন্দুয়া রির্পোটার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার জিয়াউর রহমান ‘চর্চা সাহিত্য আড্ডা’ নামের একটি সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
    
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনচলাকালে গত ৪ আগস্ট সকাল ১০ থেকে বিকেল পর্যন্ত আসামিরা পৌরসভার চিরাংমোড়, খেলার মাঠের পাশে সিএনজি স্টেশন, সাউদপাড়ামোড়, বাদে আঠারোবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভয়-ভীতি দেখানোসহ রাস্তা বন্ধ করে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনার কিছুটা দেরিতে হলেও তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন। 

মামলার এজাহারে ৭২ নম্বর আসামি জিয়াউর রহমানের বিষয়ে জানতে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাদীর মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয় মামলা করতে হবে। তাই আমি মামলাটির বাদী হয়েছি। এজাহারে উল্লেখ করা আসামির অনেককেই আমি চিনিনা। সাংবাদিক জিয়াউর রহমানকেও আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি বাদী হয়েছি। অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মামলা নিয়ে অভিযোগ থাকলে দলীয়ভাবে সমাধান করা হবে।’

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে সাংবাদিক হিসেবে মামলা দেওয়া হয়নি। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদে রয়েছেন। 

ইত্তেফাক সংবাদদাতা জিয়াউর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। তিনি কোনদিন রাজনীতির জড়িত ছিলেন না। সাংবাদিক হিসাবে সকল দলের লোকদের কাছে গিয়ে নিউজ করতে হয়। তাকে অহেতুক নাশকতার মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। 

কেন্দুয়া রিপোটার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি যুগান্তর প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান একজন পেশাদার সাংবাদিক। সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভেযোগ এনে তাকে এ ভাবে আসামি করায় স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী।

অধিকারকর্মী আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, ‘একজন পেশাদার সংবাদকর্মীকে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা উদ্বেগের।এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা, মত প্রকাশ ও মানবাধিকার পরিপন্থি কাজ। এই হয়রানিমূলক মামলা থেকে জিয়াউর রহমানের নাম অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।’

কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান মামলার কথা স্বীকার করে  বলেন, ‘আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।’

ইত্তেফাক/এএইচপি