মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সিলেটে বৃষ্টির প্রকোপ কমলেও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত

আপডেট : ০২ জুন ২০২৫, ১৯:৪৬

সিলেটে বৃষ্টির প্রকোপ কমলেও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত রয়েছে। ঢলের চাপে সীমান্ত এলাকা জকিগঞ্জে তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। কয়েকটি স্থানে কুশিয়ারার তীর উপচে পানি ঢুকছে। ফলে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে  উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। 

এদিকে ভারতের বরাক নদী দিয়ে প্রবল বেগে ঢল নামায় সুরমা-কুশিয়ারর সংযোগস্থল অমলসিদে পানির চাপ বেড়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৭ সে.মিটির ও অমলসীদে কুশিয়ারা বিপদ সীমার ১৮৫ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জে ও শেওলায় বিপদ সীমার উপরে।  জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। 

তিনি বলেন, যেহেতু ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত কমছে তাতে মনে হয় আগামী দুদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে আবহাওয়ার খবরে বলা হয়েছে রবিবার সন্ধ্যা থেকে আগামী কয়েকদিন বৃষ্টিপাত হবে। এতে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু নিয়ে মানুষ দু:শ্চিন্তায় পড়েছেন। 

সিলেটের জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। রোববার দিবাগত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত তিনটি স্থানে ডাইক ভেঙ্গে পানি  লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এতে জকিগঞ্জ উপজেলাজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতের পর  সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টির প্রকোপ কমেছে। তবে আসামের পাহাড়ি এলাকায় ভারী বর্ষণে সৃষ্ট ঢলে সিলেটের জকিগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর তিনটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। ওই তিন স্থান দিয়ে হু হু করে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ডুবতে শুরু করেছে। নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে কুশিয়ারার ডাইকে আরও ভাঙন দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভারত থেকে নেমে আসা বরাক নদীর ঢলে আশঙ্কাজনকভাবে কুশিয়ারার পানি বৃদ্ধি পেয়ে এলাকার বসতঘরে  পানি ঢুকে গেছে। 

রোববার রাত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজন নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া শুরু করেছেন। উপজেলা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।  জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের প্রায় ১শ ফুট ও বাখরশাল গ্রামে ৫০ ফুট, খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল এলাকার ৪০ ফুট বাঁধ ভেঙ্গেছে।    

জকিগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. মাহবুবুর রহমান জানান, প্রশাসন সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে।  আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত  কয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রশাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ইউএনও। 

এলাকাবাসী জানান, রবিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে জকিগঞ্জ সদর ইউনিয়নের রারাই গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক দিয়ে পানি প্রবেশ শুরু করে। সোমবার ভোররাতে একই ইউনিয়নের বাখরশাল ও সকাল ৮টার দিকে খলাছড়া ইউনিয়নের লোহারমহল গ্রামের পাশে কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। 

অন্যদিকে জকিগঞ্জ পৌর শহরের নিকটবর্তী কেছরী গ্রামের পাশে ডাইকের ওপর দিয়ে শহরে ঢুকছে কুশিয়ারার পানি। মাইজকান্দি গ্রামের কাছে ডাইকের একাংশ ধসে পড়েছে। জকিগঞ্জ ইউনিয়নের ছবড়িয়া, সেনাপতিরচক, সুলতানপুর ইউনিয়নের ইছাপুর, খলাছড়া ইউনিয়নের একাধিক স্থান, বারঠাকুরী ইউনিয়নের পিলাকান্দি ও আমলশীদসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার  অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে ডাইক উপচে পানি  প্রবেশ করছে। স্থানীয়রা বালু ও মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে ডাইক রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। 

মৌলভাবাজার: অন্যদিকে তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের নদ-নদী, খালবিল ও হাওরের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার মনু, ধলাই, কুশিয়ারা ও জুড়ী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে মনু ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে পৌর শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার তৈরি হয়। শহরের ফাটাবিল এলাকায় পাহাড়ি ঢলে মানুষের বাড়িঘর তলিয়ে যায়। পৌর শহরের পশ্চিমবাজার, কুসুমবাগ, সাইফুর রহমান রোড, সরকারি স্কুল রোডের দোকানপাঠ ও বাসা-বাড়িতে পানি ওঠে। এসব স্থানে রোববার বিকেলের দিকে জলাবদ্ধতার পানি কমে আসে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, নদীতে পানি বাড়ছে। আমরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আছি। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। 

ইত্তেফাক/এএইচপি