‘ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে আমি সব সময়ই খুব আবেগপ্রবণ। আমার ধারণা, শহরের ঈদ ফ্যাকাশে, রংহীন। শহরের বাতাসে ঈদের আমেজ নেই। মফস্বল শহর অথবা গ্রামে ঈদের আমেজ আলাদা। তাই বাড়ি ফেরাটাই যেন উৎসব। আমার কাছে ঈদ মানেই বাড়ি ফেরা, পরিবার-পরিজনের টানে ফেরা। সারা বছর পরিবার থেকে আলাদা থাকার পর ঈদেই তো কাছের মানুষদের কাছে যাওয়া হয়, আনন্দে কাটানো হয় কয়েকটা দিন। এই ফেরা যেন শুধু বাড়ি ফেরা নয়, নিজেকেই ফিরে পাওয়া।’—কথাগুলো গতকাল বুধবার রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রী চাকরিজীবী আমেনা বেগমের। তিনি স্বামী-সন্তানসহ যাচ্ছেন সৈয়দপুরে। তার মতো প্ল্যাটফরমে অসংখ্য যাত্রী। রাজধানীর কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে যথাযথ সময়েই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে প্রায় সব ট্রেনই। অন্যান্য বছর উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় থাকলেও এবার এখনো পাওয়া যায়নি তেমন অভিযোগ। গতকাল বুধবার শেষ কর্মদিবস। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ১০ দিনের লম্বা ছুটি। নগরীর বিভিন্ন বাস টার্মিনালে বেড়েছে যাত্রীর চাপ। সদরঘাটেও একই অবস্থা।
ট্রেন :গতকাল বুধবার সকাল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে ভোর থেকেই স্টেশন জুড়ে যাত্রীদের সরব উপস্থিতি ঈদ যাত্রার সেই চিরচেনা দৃশ্যকে ফিরিয়ে আনে। টিকিট অনলাইনে বিক্রির কারণে স্টেশনের কাউন্টারগুলো অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিও কমেছে বলে জানিয়েছে যাত্রীরা।
স্টেশন ম্যানেজারের সাজেদুল ইসলাম বলেন, সব ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে. স্টেশনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন। টিকিট ছাড়া কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কালোবাজারির সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পারলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাস :কল্যাণপুর, গাবতলী ও মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসগুলোতেও যাত্রীর চাপ ছিল। গতকাল বেশি মানুষ বাসে করে ঢাকা ছেড়েছেন। কল্যাণপুর বাস কাউন্টার উত্তরবঙ্গগামী একটি বাসের কাউন্টার ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, গতকাল বিকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত বাসগুলোর সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল। টিকিটও বিক্রি হয়েছে সব।
লঞ্চ :নৌ-পুলিশের সদরঘাটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানা বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে যে লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে সবাই শিডিউল। যাত্রীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ শোনা যায়নি।
যানবাহনের চাপ :খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়ক পথে ঈদ যাত্রায় ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষ ও উত্তরবঙ্গের যানবাহনের চাপ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গতকাল ভোররাতে যমুনা সেতু সংযোগ সড়কে একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ও গাড়ি বিকল হওয়ায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহনগুলো সরানোর পর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। যমুনা সেতুর পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘মহাসড়কে যানবাহনের চাপ থাকলেও যানজট নেই। মহাসড়কে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার ১৩ কিলোমিটার অংশে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। তবে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়লেও, কোথাও যানজট সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।