ইউক্রেনকে ১ লাখ ড্রোন সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। দেশটি বলছে, ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে তারা ইউক্রেনকে এসব ড্রোন দেবে, যা আগের প্রতিশ্রুতির তুলনায় ১০ গুণ বেশি। এদিকে ইউক্রেনের সুমি শহরে রুশ বাহিনীর হামলায় অন্তত তিন জন নিহত ও ১৬ জন আহত। অন্যদিকে ইউক্রেনের হামলায় রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের ৭ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল। খবর রয়টার্সের।
জার্মানির সঙ্গে সহসভাপতিত্বে আয়োজিত ৫০ রাষ্ট্রের ইউক্রেন ডিফেন্স কন্ট্যাক্ট গ্রুপ মিটিংয়ে ড্রোন সরবরাহের ঘোষণা দেবেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি। বৈঠকের আগে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন ইতিমধ্যে গোলাবারুদে সরবরাহ করে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করেছে ব্রিটেন। সমর্থন আরো জোরালো করতে চলতি বছর তাদেরকে হাজার হাজার ড্রোন সরবরাহ করা হবে।
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, ইউক্রেনের জন্য সাড়ে ৪০০ কোটি পাউন্ড সামরিক সহায়তার মধ্য থেকেই এই ড্রোন প্যাকেজ প্রদান করা হবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ কোটি পাউন্ড। এছাড়া, জানুয়ারি থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার আর্টিলারি শেল ইউক্রেনে ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে লন্ডন। ইউক্রেনীয় সেনাদের প্রশিক্ষণে আরো ২৪ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড ব্যয় করা হবে।
সোমবার একটি স্বাধীনভাবে প্রস্তুতকৃত কৌশলগত প্রতিরক্ষা পর্যালোচনা (স্ট্র্যাটেজিক ডিফেন্স রিভিউ) অনুমোদন করে ব্রিটিশ সরকার। রাশিয়ার মতো হুমকি মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর, অধিকতর শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সেখানে জোর দেওয়া হয়।
ইউক্রেনে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা রুশ আগ্রাসন মোকাবিলায় ড্রোন প্রযুক্তি যুদ্ধক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে লন্ডন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর একদিন পর জরুরি বিভাগের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত লাইনগুলো মেরামত করে সরবরাহ আবার স্বাভাবিক করে তুলেছেন।
এদিকে ইউক্রেনের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সুমি শহরে রুশ বাহিনীর হামলায় অন্তত তিন জন নিহত ও ১৬ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় জরুরি বিভাগ। রুশ বাহিনী বর্বরভাবে সুমি শহরে হামলা চালিয়েছে, এলোমেলোভাবে রকেট ছুড়েছে সাধারণ বাসিন্দাদের দিকে, এক্স-এ লিখেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
জরুরি বিভাগ জানিয়েছে, হামলায় একটি আবাসিক ভবন, তিনটি ব্যক্তিগত বাড়ি, একটি গুদাম ও একটি হাসপাতাল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুমি অঞ্চলের সরকারি কৌসুলিরা জানান, আহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। এই হামলার অভিযোগের বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এদিকে ইউক্রেনের গোলাবর্ষণ ও ড্রোন হামলায় রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ৭ লাখ মানুষ বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন রাশিয়া-নিযুক্ত কর্মকর্তারা। এর একদিন পর জরুরি বিভাগের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত লাইনগুলো মেরামত করে সরবরাহ আবার স্বাভাবিক করে তোলেন বলে জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবারের এই হামলায় ইউক্রেনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিজিয়া ও খেরসন অঞ্চলে ইউক্রেনের চালানো অন্যতম বড় হামলা হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
টেলিগ্রাম অ্যাপে রাশিয়ার জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, বিদ্যুৎ প্রকৌশলীদের সমন্বিত কাজের জন্য তাদের ধন্যবাদ। এখন সব গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিবেশী অঞ্চলের বিদ্যুৎ কর্মীরাও মেরামতকাজে সহযোগিতা করেছে। রাশিয়ার জাপোরিজিয়া ও খেরসন অঞ্চলের পুরো মালিকানা দাবি করে আসছে। ইতিমধ্যে তারা এ দুই অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। বাকি যে অল্প কিছু অংশ আছে, তা-ও দখল করতে চাইছে তারা।
রাশিয়া দাবি করে, ইউক্রেনের এসব অঞ্চল তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ঐ অঞ্চলের স্থানীয় রুশ ও রুশভাষী জনগণের ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় দখল করেছে। ইউক্রেন একে 'ঔপনিবেশিক দখল' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং কূটনীতি ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এলাকা পুনরুদ্ধারের অঙ্গীকার করেছে।
তুরস্কে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে শান্তি আলোচনার কয়েক ঘণ্টা পর এই ড্রোন হামলা চালানো হয়। শান্তি আলোচনায় রাশিয়া বলেছে, যদি কিয়েভবিশাল নতুন ভূখণ্ড ছেড়ে দেয় ও তাদের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত রাখার প্রস্তাব মেনে নেয় শুধুমাত্র তাহলে মস্কো এ যুদ্ধ শেষ করতে সম্মত হবে। রাশিয়ার নিযুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জাপোরিজিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রের পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে কিন্তু পরিস্থিতি 'কঠিন'।