শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

কয়লার দাম কমাতে আদানির সঙ্গে জুনে বৈঠকে বসছে পিডিবি

আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ১৩:২৪

আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমদানিকৃত কয়লার উচ্চমূল্য নিয়ে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান বিরোধ মেটাতে চলতি মাসেই বৈঠকে বসতে যাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও আদানির কর্মকর্তারা। আগামী ২৩ জুন এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় অবস্থিত আদানির ১,৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি করছে। ২০১৭ সালে আদানির সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করে পিডিবি, যার আওতায় ২৫ বছর ধরে বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। গত বছরের এপ্রিল থেকে প্রথম ইউনিট এবং জুনে দ্বিতীয় ইউনিট চালু হওয়ার পর থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।

তবে উৎপাদনের আগেই শুরু হয় কয়লার মূল্য নিয়ে বিতর্ক। আদানির প্রস্তাবিত দামকে অস্বাভাবিক দাবি করে পিডিবি তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে সাময়িকভাবে কম মূল্যে কয়লা সরবরাহে রাজি হয় আদানি। কিন্তু ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ফের আগের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি দামে বিল পাঠানো শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

পিডিবির অভিযোগ, চুক্তিতে উল্লেখিত সূত্রকে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা করে বাড়তি মূল্য ধরছে আদানি। অপরদিকে, পিডিবি সেই বাড়তি অংশ অনুমোদন না করায় জমে থাকা বিলের অংকে বড় পার্থক্য দেখা দিয়েছে। মে মাস পর্যন্ত আদানির দাবি অনুযায়ী বকেয়া দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ডলার, অথচ পিডিবির হিসাবে তা ৪৮ কোটি ডলার।

বিষয়টি নিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে পিডিবি কর্তৃপক্ষ আদানিকে বিদ্যমান মূল্যছাড় অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দেয়। তবে আদানি তখনই কোনো মত দেয়নি। পরে তাদের লিখিতভাবে প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং সেটির ভিত্তিতেই জুনের বৈঠক হতে যাচ্ছে। এ বৈঠকে আইনি পরামর্শকরাও অংশ নিতে পারেন বলে জানা গেছে।

গত ২২ মে আদানি বিদ্যুৎ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী শেরসিং বি খিয়ালিয়া ঢাকায় এসে পিডিবির চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে ২৩ জুনের বৈঠকটি ভার্চুয়ালি নাকি সরাসরি হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।

পিডিবি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, 'কয়লার দামের সূত্র চুক্তিতে স্পষ্ট করা আছে। বিষয়টি আইনগতও বটে, তবে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানে পৌঁছাতে চাই আমরা। একইসঙ্গে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের অন্যান্য বিষয়ও আলোচনায় আসবে।'

বিশ্ববাজারে কয়লার মূল্য নির্ধারণে সাধারণত অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল ও ইন্দোনেশিয়ার ইনডেক্স বিবেচনা করা হয়। আদানির সঙ্গে চুক্তিতেও এ দুটি সূচকের গড় মূল্যকে ভিত্তি ধরা হয়েছে। তবে বিশেষ ছাড়ে কয়লা কিনলেও, আদানি সে সুবিধা পিডিবিকে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

সরকারি একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি আদানির সঙ্গে চুক্তি পর্যালোচনা করছে। কমিটির এক সদস্য জানান, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে করা এই চুক্তিটি অসম এবং এতে আদানি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ নয়, কয়লা বিক্রিতেও মুনাফার সুযোগ রেখেছে।

উল্লেখ্য, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে দুটি ইউনিট রয়েছে, যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ৮০০ মেগাওয়াট। এখন পর্যন্ত কেন্দ্রটি থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও, কয়লার মূল্যবিষয়ক বিরোধ প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ ব্যয়ের ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

ইত্তেফাক/টিএইচ