শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

দায়মুক্তি পাওয়া সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ফের দুদকের জালে

আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ১২:১০

গ্রাহকের গচ্ছিত ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন আহমেদ ওরফে মহিকে অদৃশ্য কারণে চার্জশিট থেকে দায়মুক্তি দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনে পরে মহিউদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী নূরজাহান বেগমের সম্পদের খুঁজে নেমেছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী প্রায় চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপন করার প্রমাণ পেয়েছে দুদক। গত ১৬ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করেছে সংস্থাটি।

এরপর মামলার তদন্তে চলতি বছরের ২ জুন বক্তব্য শুনতে তলব করেছিল দুদক। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি মহিউদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী নূরজাহান বেগম।

প্রথম মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, মহিউদ্দিন আহমেদ দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে তিন কোটি ৯৭ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৩ টাকার সম্পদের তথ্য ঘোষণা প্রদান করেন। যাচাইকালে তার বিরুদ্ধে এক লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া দুদকের অনুসন্ধানে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত দুই কোটি ৭০ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮ টাকার সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। 

অপর মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী নূরজাহান বেগম দুদকে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে এক কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৭৫ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১৪ লাখ ৭০ হাজার ৫৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের প্রমাণ মিলেছে। অন্যদিকে দুদকের অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে এক কোটি ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ৮০২ টাকার জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় মামলা দুইটি দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগের মামলা ও ঘটনার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেডের ১২ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ জামানত হিসেবে নেয় ব্যাংকটি। এর সুদ জমে হয়েছে ১০ কোটি টাকা। তবে দীর্ঘ ১০ বছরেও ওই ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি নারায়ণগঞ্জ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট লিমিটেড। এতে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া হয়ে যায়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সমবায় ব্যাংকের একটি চক্র তাদের কাছে জামানত রাখা স্বর্ণ নয়ছয় করে। এ নিয়ে ২০২০ সালেই তদন্তে নামে দুদক। সমবায় ব্যাংকের ওই সময়ের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদসহ নয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের প্রমাণ পায় সংস্থাটি। 

পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে ব্যাংকটির পাঁচ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করলেও বাদ যান চেয়ারম্যান। পরে মামলার চার্জশিট থেকেও তার নাম বাদ দেওয়া হয়। নাম আসে আট কর্মকর্তার। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। ব্যাংকটি পরিচালনায় একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও কেন মামলা থেকে বাদ গেলেন চেয়ারম্যান।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার কোটবাড়িতে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ স্বর্ণ আত্মসাতের বিষয়টি আলোচনায় আনেন। তিনি বলেন, সমবায় ব্যাংকের অবস্থা পর্যালোচনা করে আমি ১২ হাজার ভরি স্বর্ণ আত্মসাতের তথ্য জানতে পারি। বিষয়টি তদন্তে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরপরেই নড়েচড়ে বসে দুদক। মহিউদ্দিন দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা করেছে। বর্তমানে তারা আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে মহিউদ্দিন আহমেদ মহির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

ইত্তেফাক/কেএইচ