রোববার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ

আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ১৭:৫৪

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে শারীরিক নির্যাতন ও মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদল নেতাসহ একাধিক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের একজন তানভির রনি, যিনি ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।

এই ঘটনায় ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার ডুমাইন গ্রামের বাসিন্দা এবং বর্তমানে বাদেডিহী এলাকায় ভাড়া থাকা ব্যবসায়ী শাহ আসাদুজ্জামানের পক্ষ থেকে তার স্ত্রীর ভাই মো. সৌরভ বাদী হয়ে শুক্রবার (১৩ জুন) কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, গত ১১ জুন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাদেডিহী গ্রামের নিজ বাসার সামনে অবস্থানকালে বাদুরগাছা গ্রামের আয়ুব হোসেনের ছেলে সবুজ ও বাদেডিহী গ্রামের মৃত আনিসুর রহমানের ছেলে আঃ করিম মোটরসাইকেলযোগে এসে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক শাহ আসাদুজ্জামানকে তুলে নিয়ে যায় ঠিকডাঙ্গা দাসপাড়া মাঠে।

সেখানে আগে থেকে অবস্থান করছিলেন শরিফুল (পিরোজপুর), তানভির রনি (মিঠাপুকুর), রিয়াজ (বাদুরগাছা), স্বপন (ঠিকডাঙ্গা), ইয়াছিন ও হামিদ ড্রাইভারসহ (পিরোজপুর) আরও কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তি। অপহরণের পর তাকে মারধর করা হয় এবং ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

রাতেই নির্যাতিতের পরিবারের পক্ষ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ছয়টি নম্বরে ২ লাখ টাকা পাঠানো হয়। পরে তারা রঘুনাথপুর বাজারের ‘বিকে স্টোর’ এজেন্ট বিকাশ থেকে উক্ত অর্থ ক্যাশ আউট করে নেয়। মুক্তিপণের টাকা পেয়ে ওই রাতেই তাকে ফাঁকা মাঠে ফেলে রেখে দেয় অপহরণকারীরা। এ সময় তাকে কাউকে কিছু না বলার জন্য হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত তানভির রনি সাংবাদিকদের জানান, ভুক্তভোগী শাহ আসাদুজ্জামান একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও হত্যা মামলার আসামি। তিনি ফরিদপুরের মধুখালী আওয়ামী লীগের সক্রিয় ক্যাডার। ৫ আগস্টের পর গা ঢাকা দিয়ে বারোবাজারে এসে আশ্রয় নেন। স্থানীয় ছেলেরা তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে এবং পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। স্থানীয় বিএনপির একটি অংশ তাকে আশ্রয় দেওয়ায় তারা এখন আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ দিচ্ছে।

তিনি আরও দাবি করেন, ঘটনার রাতে তিনি যশোরে ছিলেন এবং এ ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা নেই।

জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মানিক বলেন, তানভির রনি আমাদের সহ-সভাপতি। অভিযোগের বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে সাংগঠনিকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য বারোবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকারিয়া মাসুদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে যেসব বিকাশ নম্বর রয়েছে, সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বারোবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জাকারিয়া মাসুদ জানান, অভিযোগ হাতে পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে এবং প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় স্থানীয়ভাবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলেও জানা গেছে।

ইত্তেফাক/এমএস