রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

পাঠ্যবই ছাপার কাজ পেতে নতুন শর্ত

ছাপাখানায় সিসিটিভি বাধ্যতামূলক, নিয়ন্ত্রণ থাকবে এনসিটিবির কাছে

আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ০৬:০০

আগামী বছরের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। নিম্নমানের কাগজে ছাপানো বন্ধে কঠোর অবস্থানে সরকার। এবার ছাপার কাজ পেতে নতুন কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, প্রত্যেক ছাপাখানায় অত্যাধুনিক ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) বসানো বাধ্যতামূলক। আর এই সিসিটিভির নিয়ন্ত্রণ এনসিটিবিকে দিতে হবে। যাতে এনসিটিবির কর্মকর্তারা নিজ কার্যালয়ে বসে ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং করতে পারেন। এতে কেউ রাতের আঁধারে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর চেষ্টা করলে ক্যামেরায় ধরা পড়বে এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে এনসিটিবি।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, পাঠ্যবই ছাপানোর ক্ষেত্রে গত ১৬ বছরে নিম্নমানের কাজের যে তথ্য উঠে এসেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর মধ্যে ২০২৩ সালেই ২৬৯ কোটি টাকার অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে ২৫৫ কোটি টাকা লোপাটের পরিসংখ্যান জনমনে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক তদারকির বিষয়ে। এবার নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপিয়ে সরবরাহ করা ৪৬টি ছাপাখানা চিহ্নিত হয়েছে তদন্তে। এমন অবস্থায় আগামী বছর সময়মতো পাঠ্যবই ছাপানো ও কাগজের মান ঠিক রাখতে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত এনসিটিবি। চলতি বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি হয়েছে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাসের মাথায় সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করতে পেরেছে এনসিটিবি। আর বই পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে। এই ‘বাজে অভিজ্ঞতা’ মাথায় নিয়ে আগামী বছরের পাঠ্যবই ছাপার কাজ এবার আগেভাগেই শুরু করেছে এনসিটিবি। গত মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে জুনের মধ্যে সব দরপত্রের কাজ শেষ করে আগামী নভেম্বরের মধ্যে সব পাঠ্যবই ছাপিয়ে মাঠপর্যায়ে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনসিটিবি।

বর্তমানে এনসিটিবির নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। তিন মাসের বেশি সময় ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থাটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৭ কোটি বই কম ছাপা হবে। সেক্ষেত্রে আগামী বছর মোট বইয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ৩৩ কোটি। এছাড়া গতবারের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ছাপাখানাগুলোর সক্ষমতার চেয়ে বেশি বই ছাপানোর কাজ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেক ছাপাখানার মালিক সক্ষমতার চেয়ে বেশি পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ পেয়েছিল ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে। এ কারণে সঠিক সময়ে পাঠ্যবই বিতরণে বিলম্ব হয়েছিল। সব ছাপাখানার সক্ষমতার রিপোর্ট এনসিটিবির কাছে রয়েছে। যার যে সক্ষমতা, তার ৮০ শতাংশ কাজ দেওয়া হবে। এছাড়া নতুন সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে কোনো প্রেস একটি ওয়েব মেশিন নিয়ে এনসিটিবির দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না। কমপক্ষে দুটি ওয়েব মেশিন থাকতে হবে। পেপার মিলের সঙ্গে চুক্তির কাগজ জমা দিতে হবে। থাকতে হবে অটো-বাইন্ডিং সক্ষমতাও। ছাপাখানায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও টয়লেট থাকা বাধ্যতামূলক

প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে নবম-দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই দেয় সরকার। দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। তবে গত দুই-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। সব বই দিতে কিছুদিন দেরি হয়েছিল। এবার গত ২৪ মার্চ সর্বশেষ পাঠ্যবই সরবরাহের অনুমোদন বা পিডিআই দেয় এনসিটিবি। এভাবে এ বছর বই দেওয়ায় দেরি হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে শিক্ষা বিভাগ। চলতি শিক্ষাবর্ষে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) নির্ধারিত প্রাক্কলিত দরের তুলনায় গড়ে ২০ শতাংশ বেশি দরে ছাপানো হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ পাঠ্যবই। এ ব্যয়বৃদ্ধির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০০৬ সালের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট (পিপিএ) এবং ২০০৮ সালের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর) অনুসারে, কোনো পণ্য বা সেবার জন্য সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রাক্কলিত দরের ১০ শতাংশের বেশি হলে রি-টেন্ডার বাধ্যতামূলক। কিন্তু এবারের পাঠ্যবই ছাপার ক্ষেত্রে সে নিয়ম মানা হয়নি। এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সময় স্বল্পতার কারণে রি-টেন্ডার দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু এবার প্রাক্কলিত দরের ১০ শতাংশের বেশি হলে রি-টেন্ডার দেওয়া হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, নিম্নমানের কাগজে কেউ যাতে পাঠ্যবই ছাড়াতে না পারে সেজন্য এবার প্রত্যেক ছাপাখানায় সিসিটিভি থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম