সাগর উত্তাল থাকায় মহেষখালীতে টার্মািনালে এলএনজি সরবরাহ কমে যায়। এতে চট্টগ্রামে এরএনজি সরবরাহ ২৮০ মিলিয়ন থেকে ১৬০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে আসে। ফলে গত বুধবার থেকে দুদিন যাবত্ চট্টগ্রাম চরম গ্যাসসংকটে পড়ে। পাইপ লাইনে চাপ কমে যাওয়ায় শিল্পকারখানায় উত্পাদন অচল হয়ে পড়ে। বাসাবাড়িতে রান্নার কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। সরবরাহ পুনরায় চালু হলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে।
মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনালের মাধ্যমে আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ দেওয়া হয়। এখানে দুটি টার্মিনালের মধ্যে একটি মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি। অন্যটি সামিট এলএনজি টার্মিনাল। এই দুটি টার্মিনালের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হয়। টার্মিনাল থেকে গ্যাস বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল)।
জিটিসিএলের উপমহাব্যবস্থাপক শফিউদ্দিন মো. ফরহাদ ওমর বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গত দুই দিন দুটি টার্মিনালে কার্গো ভিড়তে পারেনি। তবে গতকাল সকালে সামিট এলএনজি টার্মিনালে একটি কার্গো যুক্ত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার পর থেকে মহেষখালী থেকে এলএনজি সরবরাহ বাড়তে থাকে। এখন প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে আসছে।’
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কর্মকর্তারা জানান, মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় থাকায় বঙ্গোপসাগর উত্তাল অবস্থার সৃষ্টি হয়। এতে সাগরের ঢেউয়ের কারণে মহেশখালীতে ভাসমান এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল থেকে সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এলএনজিবাহী কার্গো জাহাজ ভিড়তে না পারায় টার্মিনাল থেকে সরবরাহ কমে যায়। এতে চট্টগ্রামে চরম গ্যাসসংকটের কবলে পড়ে।
গত বুধবার সকাল থেকে এলএনজি সরবরাহে সংকট দেখা দেয়। এতে গৃহস্থালির পাশাপাশি বিদ্যুেকন্দ্র, সারকারখানা, শিল্পকারখানা, সিএনজি স্টেশন, হোটেল-রেস্টুরেন্টেও গ্যাস সরবরাহে চাপ কমে যায়। সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে গ্যাসসংকট চরম আকার ধারণ করে। এতে গত দুদিন যাবত্ চট্টগ্রামে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। সিলিন্ডারের গ্যাস দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ায় চেষ্টা চলে। বাসাবাড়িতে মানুষ ইলেকট্রিক চুলা, কাঠের ও কেরোসিনের চুলা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সামাল দেয়। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোহাম্মদ শফিউল আজম খান বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকায় মহেশখালীতে এলএনজিবাহী জাহাজ থেকে গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যেখানে আমরা প্রতিদিন ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট পেতাম, সেটা এখন ১৬০-১৭০-এ নেমে এসেছে। এজন্য সমস্যা হচ্ছে।’
কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি জানায়, এলএনজি সরবরাহ কমে গেলে গত বুধবার চট্টগ্রামে ১৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়। অন্য সময় চট্টগ্রামে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হয়। এতে আবাসিক, অনাবাসিক ও বাণিজ্যিক, শিল্প খাতে সরবরাহে লইনে চাপ কমে যায়।
চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি এলএনজির ওপর নির্ভরশীল। চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয় না। ফলে এলএনজি সরবরাহ বিঘ্ন ঘটলে চট্টগ্রামে গ্যাস নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ে গ্রাহকরা।
উল্লেখ্য, গত বছরও একই সময়ে সাগর উত্তাল থাকায় ভাসমান টার্মিনালে পাইপ লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তখন চট্টগ্রামে পাঁচ/ছয় দিন গ্যাস ছিল না। পাইপ লাইন মেরামতে পর সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।