তেহরানের বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অংশ নেয় ইসরায়েলের অন্তত ৬০টি যুদ্ধবিমান। হামলায় প্রায় ১২০টি আধুনিক অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। শুক্রবার (২০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
আইডিএফ দাবি করেছে, হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণকেন্দ্র এবং একটি পারমাণবিক গবেষণা স্থাপনা। তাদের ভাষায়, এসব স্থাপনা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত। তবে এ বিষয়ে ইরানের পক্ষ থেকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় বিরশেবা শহরে পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, মাইক্রোসফট অফিসের নিকটবর্তী এলাকায় আগুন দেখা গেছে। এতে আবাসিক ভবন ও যানবাহনের ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান গ্যাভ-ইয়াম প্রযুক্তি পার্ককে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি বিরশেবায় মাইক্রোসফট ভবনের কাছাকাছি আঘাত হানে। এ সময় আগুনে একটি গাড়ি পুড়ে যায়। হামলার ফলে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের রেল চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে বিশেষ বাহিনী।
ইসরায়েলের জরুরি উদ্ধারকারী সংস্থা মেগান ডেভিড অ্যাডম হামলার পরের কিছু ছবি প্রকাশ করেছে। এতে ধ্বংসস্তূপ, ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও আতঙ্কগ্রস্ত মানুষকে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবারও ইরান ইসরায়েলের তেল আবিব, হোলোন এবং রামাত গান এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। হোলোনে হামলায় গুরুতর আহত হন তিনজন, আর রামাত গানে প্রায় ২০ জনের হালকা আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এসব হামলায় মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ৬৫ জনে।
ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, এটি ছিল তাদের ১৪তম ‘সমন্বিত হামলা’, যা তারা বিভিন্ন কৌশলগত লক্ষ্যে পরিচালনা করেছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে, ইসরায়েলের পুলিশ সাধারণ মানুষকে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতপ্রাপ্ত হাসপাতাল বা আশপাশের এলাকায় না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ সোরোকা হাসপাতালের একটি অংশে ‘বিপজ্জনক পদার্থ’ লিক হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। হামলায় হাসপাতালটির জানালা ও দেয়াল ভেঙে পড়ে এবং আতঙ্কিত মানুষ করিডোর দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়।
জেরুজালেমে বিবিসির সংবাদদাতা জানিয়েছেন, ভোরের দিকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শহরজুড়ে শোনা গেছে, যা গত কয়েক দিনের মধ্যে সবচেয়ে জোরালো ছিল। ইসরায়েলের আরও কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের খবর পাওয়া গেলেও তা নিশ্চিত করা যায়নি।
রামাত গান এবং তেল আবিবের কিছু ভবনের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ছবিও ইতোমধ্যে সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ এই সংঘর্ষের ফলে ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা আরও বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে আন্তর্জাতিক মহল।