কুমিল্লার চান্দিনায় আপন জেঠাতো ভাইকে কোরবানির মাংস দেওয়ায় এক কোরবানিদাতার ঘরবাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই গ্রামের কথিত সমাজপতি প্রধান আলী আহাম্মদ ও তার ছেলেরা কোরবানিদাতা ইব্রাহীম খলিলের বাড়িতে এ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগী পরিবার।
সবশেষ শুক্রবার (২০ জুন) এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ইব্রাহীম খলিল গ্রাম ছেড়ে পলাতক রয়েছে। এর আগে কোরবানের পরদিন গ্রাম ছাড়েন তিনি। ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গত ৯ জুন চান্দিনা থানায় অভিযোগ করেন তিনি।
অভিযুক্তরা হলেন- আলী আহাম্মদ (৬৮), তার দুই ছেলে ফয়েজ আহাম্মদ প্রকাশ সোহেল (৪০) ও ফিরোজ আহাম্মদসহ (৩৭) অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ওই গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হালিম ও ইব্রাহীম খলিল জেঠাতো ভাই। প্রায় চার বছর আগে নামাজ না পড়ার অজুহাতে আব্দুল হালিমকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করেন আলী আহাম্মদ। সবশেষ গেল কোরবানি ঈদের হালিমকে কোরবানি মাংস বিতরণ করেন ইব্রাহীম খলিল। কোরবানি মাংস দেওয়ায় ইব্রাহীমের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় আলী আহাম্মদ।
ইব্রাহীম খলিল বলেন, সমাজের মসজিদে নামাজ না পড়ার অজুহাতে সমাজ প্রধান আলী আহাম্মদের সিদ্ধান্তে বিগত ৪ বছর আগে আমার জেঠাতো ভাই আব্দুল হালিমকে সমাজচ্যুত করা হয়। সেই থেকেই হতদরিদ্র হালিম কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত। প্রতিবছরই আমার কোরবানির মাংস থেকে তাকে মাংস বিতরণ করে আসছি। বিষয়টি নিয়ে প্রতি কোরবানিতেই আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে আসছে আলী আহাম্মদ। সমাজপতি কোরবানরি মাংস শরীয়াহ অনুযায়ী বিতরণ না করে তার নিজের নিয়মে মাংস বিতরণ করতে সমাজকে বাধ্য করে আসছেন। এই বছরও হালিমকে কোরবানির মাংস মাংস দেওয়ায় আমার বাড়িতে এসে গালাগাল ও হুমকি দেওয়া শুরু করে আলী আহম্মদ।
তার মনগড়া নিয়ম না মানায় আলী আহাম্মদসহ তার দুই ছেলের নেতৃত্বে ২০ থেকে ২৫ জন আমার বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। বাড়িতে পেলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে তারা। বর্তমানে তাদের ভয়ে আজ ১২দিন গ্রাম ছাড়া। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. লোকমান হোসেনসহ ওই গ্রামের রাশেদ ভুইঁয়া, রিয়াজ ভূইঁয়া ও আবুল হোসেন জানান- আলী আহাম্মদ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সমাজ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শরীয়াহ মোতাবেক কোরবানির মাংস বিতরণের নিয়মকে না মেনে সে তার নিজের মনগড়া মাংস বিতরণের নিয়ম প্রথা চালু করেছে। বাধ্য হয়ে তার এই নিয়ম মেনেই কোরবানির মাংস বিতরণ করতে হয় কোরবানিদাতারা। বিগত কয়েক বছর আগে পূর্ব শত্রুতার জেরে সমাজের মসজিদে নামাজ আদায় না করার অপরাধে গ্রামের হতদরিদ্র হালিম নামে এক ব্যক্তিকে সমাজচ্যুত করে কোরবানির মাংস পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন। ওই ব্যক্তিকে তার জেঠাতো ভাই কোরবানির মাংস দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সালিশি বৈঠক বসায়। বৈঠকে সে আলী আহাম্মদের কথা না মানায় বাড়ি ঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত সমাজ প্রধান আলী আহাম্মদ বলেন, হালিমকে সমাজচ্যুত করা হয়নি। সে নিজেই অন্য সমাজে চলে গেছে। সে মানুষকে মামলা-হামলা করায় তাকে সমাজের মানুষ গ্রহণ করে না। আমি সমাজের প্রধান। কোরবানির বিতরণ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় সমাজের লোকজন ডেকে আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। আমি মীমাংসার জন্য গিয়েছি। আমি বা আমার ছেলেরা কেউ হামলা-ভাঙচুর করেনি। এসব মিথ্যা।
চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. জাবেদ উল ইসলাম জানান, অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ঘটনার দিনই এলাকা পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।