রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

অর্থনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের ঋণ

  • ১০১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪২টি রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে
  • এসব প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত ঋণ জিডিপির ১২.৭৯ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা
  • সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ১৪টি প্রতিষ্ঠানের নিট ঋণ জিডিপির ৩.১৩ শতাংশ 
  • এসব ঋণের ৪২ শতাংশ এসেছে সরকারের কাছ থেকে, বাকি অংশ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীর
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ০৮:০০

রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ঋণের বোঝা দিন দিন বাড়ছে সরকারের কাঁধে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থাপনা এখন মাঝারি মাত্রায় ঝুঁকি তৈরি করছে বলে আশঙ্কা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারা বলছে, যদি সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এই ঝুঁকি ভবিষ্যতে আরো কঠিন হতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি আর্থিক ঝুঁকি বিশ্লেষণ মডেল অনুসরণ করে মন্ত্রণালয় ১০১টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা মূল্যায়ন করেছে। এতে দেখা গেছে, ৪২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে উচ্চ ঝুঁকিতে এবং ৩৭টি মাঝারি ঝুঁকিতে। অর্থাৎ, মোট ৭৯টি প্রতিষ্ঠানই সরকারের জন্য বড় ধরনের আর্থিক চাপের উৎস হয়ে উঠতে পারে।

গত অর্থবছরে এসব প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দেশের মোট জিডিপির ১২.৭৯ শতাংশ, যা প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। শুধু সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ১৪টি প্রতিষ্ঠানের নিট ঋণের পরিমাণই ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। এদের পরিচালনা ব্যর্থ হলে কিংবা মূলধন হারালে সেই ক্ষতি সরকারকেই পূরণ করতে হতে পারে।

ঋণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট দায়ের ৩৯ শতাংশ চলতি দায়, ২৬ শতাংশ সাবসিডিয়ারি ঋণ, ১৬ শতাংশ প্রকল্পভিত্তিক ঋণ এবং বাকিটা অন্যান্য খাতে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক ঋণের বিপরীতে সার্বভৌম গ্যারান্টিও দেওয়া হয়েছে, যার পরিমাণ এখন ১ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি।

অর্থ বিভাগ বলছে, সরকার তিনভাবে আর্থিক ঝুঁকিতে পড়তে পারে-প্রথমত, যদি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্যারান্টিযুক্ত ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, দ্বিতীয়ত, ক্রমাগত লোকসানের কারণে তাদের টিকিয়ে রাখতে বাড়তি পুঁজি জোগান দিতে হয়, আর তৃতীয়ত, প্রত্যাশিত মুনাফা না হলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যেতে পারে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থ মন্ত্রণালয় আটটি নীতি কৌশলের পরামর্শ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ খাতের টেকসই উন্নয়ন, সার ব্যবস্থাপনা, ঋণ ব্যবস্থাপনার সংস্কার, আর্থিক লেনদেনের অটোমেশন, রাজস্ব কৌশল, দক্ষ সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়ন।

সরকার ইতিমধ্যে ওএমএস ও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড কর্মসূচি চালু করেছে, ডাইনামিক সোশ্যাল রেজিস্ট্রি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে এবং বিদ্যুৎ খাতে তিন বছরের রোড ম্যাপ তৈরি করছে। কৃষি খাতেও সার্বিক মূল্যায়নের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদনের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া আর্থিক শৃঙ্খলা আনতে স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বন্ড বাজার উন্নয়নের পদক্ষেপও হাতে নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়াতে নতুন ট্যাক্স কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে এবং দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় একটি সামগ্রিক প্রস্তুতি কৌশলপত্র তৈরি করা হচ্ছে।

ইত্তেফাক/এমএএম