সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হলেও রেশমা নাহার রত্নার স্বপ্ন দেখেছিলেন যে একদিন হিমালয় জয় করবেন। এজন্য তিনি পর্বতারোহণের অভিযান শুরু করেন। দেশের কেওকারাডাং চূড়া, কেনিয়ার লেনানা চূড়া, ভারতের কাঙরি পর্বত ও কাং ইয়াতসে-২ সফলভাবে আরোহণ করেন। আগামী বছর তিনি হিমালয় জয়ের অভিযান শুরু করতেন। সাইক্লিং করার সময় রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকার চন্দ্রিমা উদ্যান সংলগ্ন লেক রোডে মাইক্রোবাস চাপায় পর্বতারোহী রেশমা নাহার রত্নার (৩৩) স্বপ্ন পিষ্ট হয়ে যায়।
শুক্রবার (৭ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে উড়োজাহাজ মোড় থেকে লেক রোড দিয়ে গণভবনের দিকে যাওয়ার সময় লেক ব্রিজের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা দিয়ে শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, রেশমা উড়োজাহাজ ক্রসিং দিয়ে সাইকেল চালিয়ে গণভবনের দিকে আসার সময় লেকের ব্রিজের দিকে টার্ন নেওয়ার সময় পেছন থেকে আসা একটি কালো রঙয়ের মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন। মাইক্রোবাসের ধাক্কায় রেশমার সাইকেলের পিছনের চাকা বেঁকে যায়। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা পুলিশ সদস্যরা রেশমাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, রেশমার দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া সাইকেলটি পুলিশ উদ্ধার করেছে। তবে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মাইক্রোবাসটি ধরা যায়নি। এ জন্য পুলিশের দুইটি টিম কাজ করছে। সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ রামমন্দির নয়, ভ্যাকসিন প্রয়োজন: দেব
তিনি আরো বলেন, রেশমা ছিলেন ধানমণ্ডির আইয়ুব আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মিরপুর টোলারবাগে পাইকপাড়া সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন তিনি।
অপরদিকে, ঘটনার পরপর শুক্রবার বিকালে নিহত রেশমার বোনের স্বামী মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন।
মনিরুজ্জামান বলেন, পেশায় শিক্ষক হলেও রেশমার রক্তে ছিল অভিযানের নেশা। পর্বতারোহণের পাশাপাশি ম্যারাথন দৌড়ে তিনি অংশগ্রহণ করতেন। তার স্বপ্ন ছিল, একদিন তিনিও হিমালয় জয় করবেন। কিন্তু মাইক্রোবাসের চাকার নিচে তার সেই স্বপ্ন পিষ্ট হয়ে গেলো।
পারিবারিক সূত্র জানা যায়, কেনিয়া পর্বতের লেনানা চূড়া জয়ের পর ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট ভারতের লাদাখে অবস্থিত স্টক কাঙরি পর্বত এবং ৩০ আগস্ট কাং ইয়াতসে-২ পর্বতে সফলভাবে আরোহণ করেন রেশমা। দুটি পর্বতই ৬ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতার। ২০১৬ সালে বাংলাদেশের পাহাড় কেওক্রাডংয়ের চূড়া স্পর্শ করার মাধ্যমে শুরু হয় রেশমার পর্বতারোহণের অভিযান। ওই বছরই মৌলিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশিতে অবস্থিত পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিইনিয়ারিংয়ে যান তিনি। কিন্তু অ্যাডভ্যান্স বেজক্যাম্পে যাওয়ার পর তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়। দেশে ফেরার পর সুস্থ হতে লেগে যায় দীর্ঘদিন। পরবর্তী সময়ে নিজ উদ্যোগে সফলভাবে পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি।
ইত্তেফাক/এমএএম