শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মালিবাগে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগ

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২১, ২১:৪৫

রাজধানীর মালিবাগে ‘হলি লাইফ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে’ ইয়াসিন ওয়াহিদ (১৯) নামে চিকিৎসাধীন এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন তাকে খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ইয়াসিন গত বছর এসএসসি পাস করেছিলেন। মানসিক সমস্যা নিয়ে গত ২২ জানুয়ারী তাকে ওই নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছিল।

ওই নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন দাবি করছে, ইয়াসিন বাথরুমে আত্মহত্যা করেছে। ওই তরুণের স্বজনদের অভিযোগ, নির্যাতন করে হত্যার পর আত্মহত্যার প্রচার চালানো হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। পুলিশ সেখান থেকে চারজনকে আটক করে হাতিরঝিল থানায় নিয়েছে।

ইয়াসিনের বাবা মাসুদ মিয়া জানান, তার ছেলে মাদকাসক্ত ছিল না। প্রায় সব সময়ে নানাকিছু দাবি করতো। না দিলেই উল্টাপাল্টা আচরণ করতো। এরপর মালিবাগের ডিআইডি রোডের ওই নিরাময় কেন্দ্রে তাকে ভর্তি করা হয়। দুই দফা ছেলেকে দেখতে গেলেও ‘বড় হুজুরের’ অনুমতি নেই জানিয়ে তাকে ফেরত পাঠানো হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে নিরাময় কেন্দ্রের লোকজনই তাকে ডেকে নেন। তখন দেখেন অচেতন ইয়াসিনকে ধরাধরি করে সিড়ি দিয়ে নামানো হচ্ছে। পরে তাকে খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, নিরাময় কেন্দ্রে ইয়াসিনকে ভর্তির সময়ে সেখানের লোকজন জানিয়েছিল, চিকিৎসার পাশাপাশি ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষাও দেওয়া হবে। এজন্য তারা মাসে ৫০ হাজার টাকা চেয়েছিল। তবে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার চুক্তি হয়। গত বৃহস্পতিবারও তিনি ছেলেকে দেখতে গিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আসেন। কিন্তু বড় হুজুরের অনুমতি নেই জানিয়ে টাকা রেখে ছেলেকে না দেখেই তাকে ফেরত পাঠানো হয়। 

তার দাবি, ছেলেকে তখনই নির্যাতন করে আহত করা হয়েছিল। এজন্য তাকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। মঙ্গলবারও নির্যাতন করে মেরে ফেলার পর তাকে খবর দেওয়া হয়। মাসুম মিয়ার অভিযোগ, তার ছেলে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেনি। তাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন। তিনি বাথরুমে গিয়েও দেখেছেন, ওখানে গলায় ফাঁস দেওয়ার মত কোন জায়গা নেই। 

হলি লাইফ মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক ইয়াজ উদ্দিন বলেন, ইয়াসিন নামের ওই রোগী সব সময়ে উত্তপ্ত আচরণ করতো। আত্মহত্যার চেষ্টা চালাতো। মঙ্গলবার সকালে সে বাথরুমে যায়। দীর্ঘক্ষণেও বের না হলে দায়িত্বরত লোকজন গিয়ে দেখে গামছা পেঁচিয়ে সে পড়ে আছে। এরপর তাকে উদ্ধার করে দ্রæত হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।

হাতিরঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মহিউদ্দিন ফারুক জানান, খবর পেয়ে তারা ইয়াসিনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছেন। নিরাময় কেন্দ্র থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই করছেন। তা ছাড়া সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে থানায় নেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষে ওই তরুণের মৃত্যুর বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। 

ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহের সুতরহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেন হাতিরঝিল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি জানান, ইয়াছিন ইয়াবা সেবন করতো। এছাড়া কিছুটা মানসিক সমস্যাও ছিলো বলে শুনেছি। মৃতের বাম পায়ের গোড়ালীতে পুরাতন আঘাতের দাগ ও বাম হাতে পুরনো কাটা চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। 

এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত ইয়াছিনের ময়না তদন্ত করেন ঢামেক ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ। তিনি জানান, মরদেহের গলায় দাগ, বাম হাতের কনুইয়ের ওপরে ও বাম পাজরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে গলা থেকে টিস্যু, ভিসেরা ও রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোর রিপোর্ট আসলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

নিহত ইয়াসিনের বাড়ি বরিশাল বাকেরগঞ্জ উপজেলার বড়পাশা গ্রামে। তবে তিনি পরিবারের সঙ্গে মেরুল বাড্ডা এলাকায় থাকতেন। দুই বোন এক ভায়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট ছিলেন। 
ইত্তেফাক/এমএএম