শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ডিআইজি মিজান কি দুদকের চেয়ে বড়!

আপডেট : ১৭ জুন ২০১৯, ০০:৪৩

৪০ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের পরেও দুদকের পরিচালক ও একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেছে, ‘ডিআইজি মিজান কি দুদকের চেয়ে বড় (ক্ষমতাশালী)? তাকে তো গ্রেফতার করতে পারছেন না। কেন তাকে গ্রেফতার করছেন না।’ 

দুর্নীতির একটি মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ গতকাল রবিবার আলোচিত ঘুষ লেনদেন প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন।

জবাবে দুদক কৌঁসুলি খুরশীদ আলম খান বলেন, যে মামলায় তার (ডিআইজি মিজান) গ্রেফতার হওয়ার কথা সেটাতে ইতিমধ্যে চার্জশিট মেমো অব এভিডেন্স দেওয়া হয়েছে। যিনি তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন তাকে নিয়ে সমস্যা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুদক অ্যাকশন নিয়েছে। ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করে নতুন একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন তদন্ত কর্মকর্তা কাজ শুরু করেছেন।

এ পর্যায়ে দুদক কৌঁসুলিকে আদালত বলে, আপনাদের একজন কর্মকর্তার (এনামুল বাছির) বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ এসেছে। এটা তো দেশ ও জাতির জন্য শঙ্কার। দুদক কৌঁসুলি বলেন, কমিশনের পক্ষ থেকে ঐ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ পর্যায়ে আদালত বলে, পত্রিকায় দেখলাম শৃঙ্খলা ভঙ্গ আর তথ্য পাচারের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছেন। ঘুষ গ্রহণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেননি।

দুদক কৌঁসুলি বলেন, ঘুষ গ্রহণের জন্য ব্যবস্থা নিতে হলে আগে অনুসন্ধান করতে হবে। অনুসন্ধান শেষে এজাহার দায়ের করতে হবে। আইনের বাইরে গিয়ে তো কিছু করতে পারব না। তবে কমিশন বিষয়টি অত্যন্ত আইনানুগভাবে গুরুত্ব সহকারে দেখছে। কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।

হল মার্কের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের বিরুদ্ধে প্রায় ৮৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদক। এই মামলায় তাকে জামিন দেয় হাইকোর্ট। ঐ জামিন বাতিল চেয়ে করা লিভ টু আপিলের শুনানিতে ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় দুদক আইনানুযায়ী ব্যবস্থা না নেওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করে সর্বোচ্চ আদালত। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।

প্রসঙ্গত, পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে দুই দফায় ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তথ্য ফাঁসের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে দুদক। তবে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন এনামুল বাছির।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, মিজানের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের ঘটনায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছিলেন দুদক পরিচালক এনামুল। তাঁর সঙ্গে চুক্তি হয় টাকার বিনিময়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাইয়ে দেবেন মিজানকে। তবে টাকা নিয়েও শেষ পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধেই প্রতিবেদন জমা দেন এনামুল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অবৈধ লেনদেনের এ ঘটনা দুদকের কাছে ফাঁস করেন ডিআইজি মিজান। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে কমিশন।

আরও পড়ুন: ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবি, এক নারীর লাশ উদ্ধার

জানা গেছে, গত বছর নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মিজানকে। এরপর তাঁর বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে কমিশন।

ইত্তেফাক/নূহু