শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে প্রয়োজন শ্রমিকের শোভন কর্মপরিবেশ ও মজুরি

আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:১৪

দেশের যে চলমান উন্নয়ন, তা অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া দরকার। কাউকে পেছনে রেখে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের স্বার্থে খেটে খাওয়া শ্রমিকের জন্য ভাবতে হবে। তাদের কথা শুনুন এবং উন্নয়নের অংশীদার ভাবুন। এজন্য শোভন কর্মপরিবেশ ও শোভন মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এক সংলাপে বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত প্রকাশ করেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে ঐ সংলাপের আয়োজন করা হয়। ‘ন্যাশনাল ডায়ালগ অন দ্য ফিউচার ওয়ার্ক’ শীর্ষক ঐ সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী। শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান ছাড়াও দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মঅধিবেশনে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে শ্রমিক নেতারা এখনো শ্রমিকের বিভিন্ন বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন। শ্রমিকের নামমাত্র ক্ষতিপূরণ, হয়রানি তথা শ্রমিক স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলো উঠে আসে। শ্রমিক নেতা ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, একজন শ্রমিকের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ হিসাবে পাবেন মাত্র দুই লাখ টাকা। এটি খুবই অপর্যাপ্ত। ক্ষতিপূরণ হওয়া উচিত নিহত শ্রমিকের ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য আয়ের হিসাবের ওপর ভিত্তি করে। এছাড়া শ্রমিকদের ওপর সহিংসতাসহ আরো কিছু ইস্যু তুলে ধরে এক্ষেত্রে আইএলওর সংশ্লিষ্ট নীতিমালার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন।

বাংলাদেশে আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পুটিআইনেন টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে শ্রমিকের কারখানা মালিক, শ্রমিক ও সরকারের যৌথ উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, শ্রমিকের কথা শুনুন।

এ সময় বক্তারা বাংলাদেশে শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে আইএলওর কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। বিশেষত ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রাখার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসে। ড. গওহর রিজভী বলেন, আইএলও গত এক শতাব্দী ধরে মানব সেবার কাজ করতে পাশে দাঁড়িয়েছে। দুঃখজনকভাবে শ্রমিক ও শ্রমকে এখনো পণ্য হিসেবে দেখা হয়। শ্রমিকদের সমান অংশীদার হিসেবে দেখা উচিত। এটি সম্ভব হবে তাদেরকে সমান মর্যাদা দেওয়ার মাধ্যমে।

সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, তিন পক্ষের মধ্যেই আস্থা তৈরি করতে পেরেছে আইএলও। তবে শ্রম অধিকার রক্ষার বিষয়টি এখনো আইএলওর জন্য বড়ো চ্যালেঞ্জ। শ্রমিকের জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আইনি সংশোধনের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। গত কয়েক বছরে এক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, সব পক্ষকেই সবার কথা শুনতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন খাতে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে এখনো শিশু শ্রম পুরোপুরি নিরসনে কাজ করা, শোভন কর্মপরিবেশ এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন।

দিনব্যাপী ঐ সংলাপের বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান টি রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু প্রমুখ।

ইত্তেফাক/আরকেজি