শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে বেড়েছে অর্থ পাচার

আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:১২

অর্থ পাচারের মাত্রা এতই বেড়েছে যে, বাংলাদেশে এখন বিষয়টিকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার বেড়েছে বলে বিভিন্ন সংস্থার তথ্যে উঠে এসেছে। এমনকি অর্থ পাচার হওয়া প্রথম ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। যা নীতিনির্ধারকদেরও ভাবিয়ে তুলেছে।

এ অবস্থায় অর্থ পাচার ঠেকাতে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গঠন করা হয়েছে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটি। যদিও এ কমিটি শুধু তদন্ত করে রিপোর্ট প্রণয়ন করবে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সংশয়, কেবল ‘ছোটোরাই’ তদন্তের বেড়াজালে বন্দি হবেন কি না। ‘বড়ো’দের ব্যাপারটি উহ্যই থেকেই যাবে হয়তো।

জানা গেছে, মানিলন্ডারিং বা মুদ্রা পাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চুক্তিবদ্ধ। সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ঠেকানোর কৌশল হিসেবেও অর্থ পাচার প্রতিরোধে জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশই পাচারকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তি হয়ে গেছে। তাই পাচারকৃত অর্থ চিহ্নিত করার নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন উপমহাব্যবস্থাপকের নেতৃত্বে নয়, সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। 

সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে কার্যরত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংকগুলোর জন্য একটি গাইডলাইনও জারি করে। বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পাদনের বিষয়ে ব্যাংকগুলোকেও পরিদর্শন করা হবে। একই সঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের তদন্ত কার্যক্রমে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহযোগিতারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, পাচারকৃত অর্থের বেশির ভাগ অর্থাত্, ৮০ শতাংশেরও বেশি বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে পাচার হয়। বিএফআইইউ সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিং ও আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অর্থ পাচারের হার সবচেয়ে বেশি। আমদানিযোগ্য পণ্য বা সেবার মূল্য বৃদ্ধি করে বিশেষত যে সকল পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কম যেমন মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল, কম্পিউটার সামগ্রী ইত্যাদি বা যে সকল পণ্য বা সেবার দাম নির্ধারণ কঠিন সে সকল পণ্য বা সেবা আমদানির মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়ে থাকে। 

বিপরীতে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে অবশিষ্ট অর্থ বিদেশে রেখেও অর্থ পাচার ঘটে থাকে। পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যের বিবরণ পরিবর্তন করে বা কোনো পণ্য আমদানি না করে শুধু ডকুমেন্টের বিপরীতে মূল্য পরিশোধ করেও অর্থ পাচার হয়ে থাকে। একই পণ্য বা সেবার একাধিক চালান ইস্যুকরণ, ঘোষণার তুলনায় পণ্য বা সেবা বেশি বা কম জাহাজীকরণের মাধ্যমেও অর্থ পাচার হয়ে থাকে।

বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডির যৌথ উদ্যোগে প্রণীত ‘বাংলাদেশের মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন ঝুঁকি নিরূপণ প্রতিবেদন’ এ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও বিদেশে অর্থ পাচারকে ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। 

চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) কর্তৃক অর্থ পাচার বিষয়ক প্রতিবেদন অনুযায়ী ট্রেড মিসইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ বাইরে চলে গেছে এমন প্রথম ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৮তম। একইভাবে উক্ত রিপোর্টে ট্রেড মিসইনভয়েসিং এর মাধ্যমে অবৈধভাবে অর্থ দেশে প্রবেশ করেছে এমন প্রথম ৫০টি দেশের তালিকায়ও রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

আরও পড়ুন: কানাডার প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা এন্ড্রুর পদত্যাগ

পরিস্থিতি সামাল দিতে নিবিড় তদন্তের উদ্যোগ হিসেবে এরই মধ্যে শীর্ষ আমদানি-রপ্তানিকারকদের তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ। আমদানি তথ্য পর্যালোচনা করে অস্বাভাবিক আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে এমন কতিপয় ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব ব্যাংকে পরিদর্শন চালিয়ে মানিলন্ডারিংয়ের হোতাদের ধরা হবে এবং সহযোগিতার যোগসূত্র পেলে ব্যাংকারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়।

ইত্তেফাক/নূহু