মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অর্থবছরের পাঁচ মাস

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে

আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:১০

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৮ হাজার ৩০৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। যা অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ বা শতকরা ৩৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে মোট কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছিল ৭ হাজার ৪৭৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা টাকা। সে হিসেবে এ বছর সরকারি ও বেসরকারি সব ব্যাংকেই কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

চলতি অর্থবছরে ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লিঋণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো ১০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১৩ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা বিতরণ করবে। এ পর্যন্ত বিতরণ হওয়া ৮ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৪ হাজার ৪৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আর দেশি-বিদেশি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৪ হাজার ২৫৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।

নতুন নীতিমালায় বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এমএফআই নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব শাখা এবং এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কৃষিঋণ প্রদান।

কাজু বাদাম ও রামবুটান চাষ, কচুরিপানার ডাবল বেড পদ্ধতিতে আলু চাষ, ছাগল, ভেড়া, গাভী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, বাণিজ্যিকভাবে রেশম উত্পাদনে ঋণ প্রদান করা যাবে। বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে ফসল উত্পাদনে ৪ হাজার ৪৮৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা; সেচ ও সেচের যন্ত্র ক্রয়ে ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা; কৃষি খামারে ১ হাজার ২৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা; শস্য সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণে ৪৮ কোটি ৬ লাখ টাকা; দারিদ্র্য দূরীকরণে কর্মোদ্যোগে ৬৮৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং কৃষি সম্পর্কিত অন্যান্য আর্থিক কর্মকাণ্ডে ১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে বাধ্য করা হচ্ছে। যার প্রধান কারণ কৃষিঋণে ব্যাংকগুলোর অনীহা। এছাড়া অন্যান্য খাতের তুলনায় কৃষিঋণে সুদের হার কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো এ খাতে অনাগ্রহ দেখায়। অন্যদিকে ঋণ নিতে নানা হয়রানি ও মামলার ভয়ে কৃষক ব্যাংক বিমুখ হয়ে পড়েন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নির্দেশনায় অর্থবছরের শেষের দিকে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, বছরের শুরুতে কৃষিতে ঋণ বিতরণ কম হলেও শেষের দিকে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে। কারণ, ব্যাংকগুলো অর্থবছর শেষে স্থিতিপত্রের স্বাস্থ্য ভালো দেখাতে ও খেলাপি কমানোর জন্য ঋণ বিতরণ ও আদায় জোরদার করে। এরই ফল কৃষিঋণের বিতরণ ও আদায়ে দুটোই বেড়েছে। এদিকে কৃষিঋণ বিতরণের পাশাপাশি আদায়েও জোর দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

যেসব ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণ কম করে, জরিমানা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে রাখা হয়। পরের বছর অনর্জিত টাকা পুনরায় বিতরণ করলে কেটে রাখা টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে যখন কৃষিঋণ বিতরণ ২ শতাংশ হারে বাধ্যতামূলক করা হয়, সে বছর কৃষিঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ৯ হাজার কোটি টাকার কিছু ওপর। ১০ বছরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু বছর শেষে কৃষিতে ঋণ বিতরণ হয় ২৩ হাজার ৬১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের ২ শতাংশ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করার কথা। পল্লি অঞ্চলের দারিদ্র্য দূরীকরণে বিভিন্ন প্রকার কর্মসূচিতে ঋণ বিতরণও কৃষিঋণের আওতাভুক্ত। তথ্য অনুযায়ী অন্যান্য ঋণের পাশাপাশি অনুপাতিক হারে কৃষিঋণ বিতরণ করা বাধ্যতামূলক। যেসব ব্যাংকের পল্লি অঞ্চলে শাখা নেই সেসব বাণিজ্যিক ব্যাংককেও এনজিও লিংকেজের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হারে কৃষিঋণ বিতরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুদহার নির্ধারিত আছে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ) নির্ধারিত ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণে নির্ধারণে যে সুদহার সেই হার। সরকারের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচির কর্মসূচির সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালের এ কার্যক্রম শুরু করে।

 ইত্তেফাক/বিএএফ