শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অর্থনীতিতে শঙ্কা বাড়াচ্ছে

আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২১, ০৮:১২

করোনার ভয়াবহতা কোনোভাবেই যেন পিছু ছাড়ছে না। গত বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল করোনার প্রথম সংক্রমণ। শুরু হয় লকডাউন, সব ধরনের অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আশা করা হয়েছিল, এভাবেই করোনা মুক্ত হবে দেশ। প্রকোপ কিছুটা কমল বৈকি, কিন্তু জুলাই মাস থেকে আবার ঊর্ধ্বমুখী হওয়া শুরু হলো।

এ বছর মার্চে শুরু হলো করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বেশি তীব্র। নতুন ভ্যারিয়েন্টটি বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং বিশ্বের বহু দেশকে মারাত্মকভাবে বিপদগ্রস্ত করে তুলে। করোনার ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে তার ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে এখন তা সারা দেশের গ্রাম-শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় ১ জুলাই থেকে সাত দিন সারা দেশে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ ঘোষণা করছে সরকার। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে মাত্র পাঁচ দিন বিরতি দিয়ে আবার ২৩ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে ‘কঠোর লকডাউন’। লকডাউনের প্রভাবে সারা দেশে জীবন-জীবিকায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব শুরু হয়েছে। জীবন-জীবিকার সব ধরনের উত্স বন্ধ থাকায় ইতিমধ্যেই ঢাকাসহ সব শহরাঞ্চল ছেড়েছেন কর্মহীন বহু মানুষ। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ আছে। এছাড়া সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। বন্ধ আছে শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট, পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র। এতে স্থবিরতা নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে পুরো অর্থনীতি অঙ্গনে।

এসএমই ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস মহামারিকালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৭ শতাংশ কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন। ৭০ শতাংশ কর্মীর চাকরি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ৮৩ শতাংশ ছোট উদ্যোক্তা লোকসানে পড়েছেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তাদের বিক্রি ৯৪ শতাংশ কমে গেছে। ৩৩ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে ২১ শতাংশ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন এবং ১৬ শতাংশ বিকল্প উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন। এ খাতের মাত্র তিন শতাংশের ব্যবসা আগের মতো চালু আছে। ৫৯ শতাংশ কুটির ও ছোট উদ্যোক্তা সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন।

পোশাক খাত নির্ভরতায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। যা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৮৫ ভাগ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন। লকডাউনের কারণে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

করোনার থাবায় দেশে বেকারত্ব ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে কোভিডের অভিঘাত। কর্মসংস্থান হারিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এ নিয়ে বেসরকারিভাবে নানা তথ্য এলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ১৯ সদস্যের একটি গবেষক দল। বিভিন্ন উপাত্ত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তারা জানিয়েছেন, মহামারির কারণে দেশে গত বছর কর্মসংস্থান হারিয়েছে ২৬ লাখের বেশি মানুষ। দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে কোভিডের অভিঘাত। কর্মসংস্থান হারিয়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। এ নিয়ে বেসরকারিভাবে নানা তথ্য এলেও এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন: ঋণ পরিশোধের সীমা আরও দুই মাস বাড়লো

করোনা ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কায় অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান লকডাউন কতদিন দীর্ঘায়িত হবে তা বলা যাচ্ছে না। বর্তমান সংক্রমণ পরিস্থিতি ও প্রাণহানি যেভাবে বিস্তৃত হচ্ছে, তাতে সংকট আরো দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন সংস্থা। রপ্তানি আয় ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় চাপ তৈরি হবে। একই সঙ্গে শিল্প উত্পাদন যখন কমে যাবে, তখন কাঁচামাল-যন্ত্রপাতি চাহিদা কমার সঙ্গে আমদানি রাজস্বও কমে যাবে।

বিদায়ি অর্থবছরে (২০২০-২১) সরকারি হিসাবে করোনা মহামারিতে আর্থিক ক্ষতি ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা (১ হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার)। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে দেশের অর্থনীতির ওপর লকডাউনের কালো ছায়ায় কীভাবে গ্রাস করেছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আগামীতে প্রধান চ্যালেঞ্জই হবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা—এমনটি মনে করছেন অর্থনীতিবিদ, সরকারের নীতিনির্ধারকসহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, যত দ্রুত সম্ভব করোনা টিকা জোগাড় করা। আর সবাইকে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়া নিশ্চিত করা।

ইত্তেফাক/কেকে