রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে আর পুনঃ অর্থায়ন করা হবে না বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই ব্যাংকগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল রবিবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ইআরডি সম্মেলনকক্ষে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর সাংবাদিকদের অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন থেকে সরকারি ব্যাংকগুলোতে আর কোনো ধরনের রি-ফাইন্যান্সিং করা হবে না। তাদের নিজেদেরই আয় করতে হবে এবং সরকারকে ট্যাক্সও দিতে হবে। তাদের কর্মপরিকল্পনা করতে বলেছি। ঐ কর্মপরিকল্পনার ওপর আগামী রবিবারের পরের রবিবার আবার তাদের নিয়ে বৈঠকে বসব। সে সময় বিস্তারিত আলোচনা হবে।’
কর্মপরিকল্পনায় কী ধরনের বিষয় থাকতে পারে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকগুলোকে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ মুনাফা করতে হবে। খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের যে সম্পদ আছে, তার সুষ্ঠু ব্যবহার করে অন্তত ১৫ শতাংশ লাভ করুক, এটা চায় সরকার। এই ব্যাংকগুলোর শীর্ষপর্যায়ে নুতন নিয়োগের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, নতুন টপ ম্যানেজমেন্ট সুস্পষ্টভাবে পারদর্শী। তারা সবাই যদি অভিজ্ঞতার আলোকে, দেশের চাহিদার নিরীখে এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করেন, তাহলে অসাধারণ কিছু প্রত্যাশা করা যায়। জনগণকে সেবা দিয়ে মুনাফা বাড়াতে হবে। অর্থনীতি মানুষের জন্য। সরকার এমন কিছু করবে না, যাতে জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
দেশের ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট নেই উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলোতে ৯২ হাজার কোটি টাকা বাড়তি তারল্য রয়েছে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমানোর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মন্দ ঋণ এখনো কমাতে পারি নাই। খেলাপি ঋণ এখনই কমার সুযোগ নেই। কারণ আমরা যে এক্সিট প্ল্যান করেছি, সেটি বাস্তবায়ন করতে পারি নাই। তবে শিগগির এটির সুরাহা হবে বলে আমার বিশ্বাস।’
তিনি বলেন, ভালো ও মন্দ দুই ধরনের ব্যবসায়ীরা এই সুবিধা নিতে চাইবেন। উচ্চ আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। আইনের দ্রুত সুরাহা হলেই খেলাপি ঋণের বর্তমান চিত্র থাকবে না। বিশ্বের সাম্প্রতিক প্রবণতায় মন্দার শঙ্কা জানিয়ে তাতে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মন্দা তৈরি হলে বিলাসী পণ্যের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই মৌলিক পণ্য রপ্তানি করে থাকি। তাই আমাদের রপ্তানি কমার সম্ভাবনা নেই। একইভাবে আমাদের পুঁজিবাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ আমাদের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন নেই।’
আরও পড়ুন: এত কিছুর পরও সরানো যায়নি তারের জঞ্জাল
জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নামার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ আমরা অবকাঠামো খাতে অনেক বিনিয়োগ করেছি। বর্তমানে এসবের সুফল পাব। এসবের সুফল পেতে থাকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নামবে না। আমাদের আর্থিক খাত ঠিকভাবে চলছে। আমরা অর্থনীতির সব খাতেই ভালো করছি।’
ইত্তেফাক/নূহু