প্রিয় বন্ধুরা, আজ আমি তোমাদের বলব আমার গল্প, আমার করোনাকালীন দিনযাপনের গল্প। আমার নাম বিশাল পাল নির্ঝর। আমার বয়স ১২ বছর। আমি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছি। করোনা যখন শুরু হলো তখন আমি দুরন্ত টিভির ধারাবাহিক নাটক ‘স্বপ্নঘুড়ি’র শুটিং-এ ছিলাম। সে স্থানটি ছিল খতিব খামার বাড়ি, হোতাপাড়া, গাজীপুর। তারপর শুটিং যখন শেষ হলো ঠিক দুই দিন পরে পিইসি পরীক্ষা শুরু হলো। দেখতে দেখতে পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেল। আর করোনাও ছড়িয়ে পড়তে লাগল গোটা পৃথিবীতে।
আমি একটা অডিশন দিয়েছিলাম, মুভিটার নাম ‘মানিকের লাল কাঁকড়া’। সেখানে আমি নির্বাচিত হয়েছি। চলতি বছর মার্চের ১৮ তারিখে আফজাল আঙ্কেল আমাদের ডেকেছিলেন। কবে থেকে শুটিং শুরু করা যায়—এ বিষয়ে কথা বলার জন্য। কিন্তু ধীরে ধীরে করোনা ভয়ংকর মহামারি রূপ ধারণ করল। আর সেজন্য শুটিং বন্ধ হয়ে গেল। তারপর স্কুলও বন্ধ ঘোষণা করল। স্কুল বন্ধ হওয়ার পর আমি দুশ্চিন্তায় ছিলাম কীভাবে লেখাপড়া এগিয়ে নিয়ে যাব। কিছুদিন পর আমাদের অধ্যক্ষ স্যার Google meet-এ সবার সঙ্গে কথা বলে জানালেন যে আমাদের অনলাইনে ক্লাস শুরু হবে, তখন আমার মনটা ভালো হয়ে গেল।
এখন বন্ধুদের সঙ্গে Google classroom-এ পড়ার বিষয়ে আলোচনা করি, গল্প করতে পারি এবং মাঝেমধ্যে লুডু, ক্যারাম খেলি। আর বাসায় বসে ভাইয়ের সাথে খেলাধুলা করি, নাচ অনুশীলন করি, গল্পের বই পড়ি। কিন্তু আমি শিশু একাডেমির বন্ধুদের অনেক মিস করি। আমার মা বাসার সামনে ছোট একটা সবজির বাগান করেছে। কিছুটা হলেও আমি মাকে সাহায্য করি। কিন্তু যখন বাগানে যাই তখন মুখে মাস্ক এবং হ্যান্ড গ্লাভস পরে নিই। আমরা বন্ধুরা মিলে ছোট্ট একটা ভিডিও চিত্র বানিয়েছি। এই শুটিংটা যার যার বাসায় বসে করেছি। এটার বিষয়বস্তু ছিল ইফতারি নিয়ে। আমি, মৌমি আপু এবং দৃতি হুমায়রা মৌ লাইভে এসেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেদিন আমি কথা বলতে পারিনি নেটের সমস্যার কারণে।
আরেকদিন মৌমি আপু অতিথি হিসেবে এসেছিল আর আমরা তাকে প্রশ্ন করেছিলাম। সেইদিন মজা লেগেছিল। এর মধ্যে বিজ্ঞাপনের কাজ এসেছিল, কিন্তু আমি অনলাইন পরীক্ষার কারণে কাজটা করতে পারিনি। যা-ই হোক আমার একটি কষ্টের বিষয় হলো, গত মে মাসের ২৭ তারিখে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে ইউক্রেনে ডান্স পারফর্ম করার কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে আমার যাওয়াটা স্থগিত হয়ে গেল। এর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। যা-ই হোক, সবার উদ্দেশে আমি এটাই বলব, এই মহামারি করোনায় সবাই সচেতন থাকবেন। বারবার হাত ধোবেন। বাইরে যাওয়ার সময় মুখে মাস্ক এবং হ্যান্ডগ্লাভস পরবেন। এবং সবসময় সঙ্গে সেনিটাইজার রাখবেন। আর যখন করোনা ভাইরাস শেষ হবে তখন আমরা বাইরে যেতে পারলে মুক্ত মনে হবে। তখন আমরা পাখির মতো ডানা মেলে উড়ব। সবাই সচেতন হই, নিজে নিরাপদে থাকি এবং সবাইকে নিরাপদে রাখি। করোনার দিন শেষ হবে একদিন।
ষষ্ঠ শ্রেণি, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ
লেখা পাঠানোর ঠিকানা : [email protected]