বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনার লক্ষণ নিয়ে দেশে আরো সাত জনের মৃত্যু

আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২০, ১৩:৪৫

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে আবু তাহের (৫০) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরের দিকে ওই ব্যক্তি মারা যান। করোনা ভাইরাসের উপসর্গ থাকায় তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল। ওই ব্যক্তি নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। তার শরীরে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান। মৃতের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার রিপোর্ট যদি নেগেটিভ হয় তাহলে স্বজনদের কাছে সাধারণভাবে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। আর যদি পজেটিভ হয় তাহলে সে অনুযায়ী মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হবে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে এ ব্যক্তিসহ আট জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রবিবার ও শনিবার রাতে এদের মৃত্যু হয়। এসব মৃত্যুর পর কোনো কোনো এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। আবার বেশ কয়েকজনকে কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে। ইত্তেফাকের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর।

সোনারগাঁওয়ে জ্বর সর্দিতে অসুস্থ্য বৃদ্ধের মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুরে জ্বর সর্দিতে অসুস্থ হয়ে ৭৫ বছর বয়সি জিল্লুর রহমান নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের সেনপাড়া এলাকায় ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পর ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তার মৃত্যুর পর দুপুরে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি টিম সেনপাড়া এলাকায় গিয়ে ওই ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইডিসিআর)-এ প্রেরণ করেছেন।

নিহত জিল্লুর রহমান কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার তাম্মি নয়াপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল হেলিনের ছেলে। তিনি সেনপাড়া এলাকার সোহেল মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া বলে জানা যায়।

কালকিনিতে জ্বর ও গলা ব্যথা নিয়ে এক জনের মৃত্যু

মাদারীপুরেরর কালকিনিতে শনিবার রাত ১২টার দিকে জ্বর ও গলাব্যথা নিয়ে এক ব্যক্তি মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তি কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের চরআলিমাবাদ গ্রামের সদর আলী ফকিরের পুত্র আবদুস সালাম ফকির (৬০)।

কয়ারিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার শহিদুল ইসলাম বলেন, রাত ৩টার দিকে কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমাকে ফোন দিয়ে আমার ওয়ার্ডে এক জন ব্যক্তির মৃত্যু সংবাদ দিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিলে আমি রাতেই সেখানে যাই। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, বিকালে তিনি বাড়ির পাশে দোকান ছিলেন। সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর বাড়ি এলে শরীরে জ্বর ও গলা ফুলে যায়। এসময় তারা স্থানীয় এক জন চিকিত্সকে ডেকে আনলে তিনি কিছু ওষুধ দেন। পরবর্তীকালে রাত ১২টার দিকে সালাম ফকির মৃত্যুবরণ করেন।

গোবিন্দগঞ্জে সর্দি-জ্বরে ১ জনের মৃত্যু

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সোনাচরণ দাশ (৭০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টা দিকে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তিনি উপজেলার গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের মৃত্যু নোছনা চরণ দাশের ছেলে।

সোনাচরণের পারিবারিক সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে গলাব্যথা নিয়ে পল্লী চিকিত্সকের শরণাপন্ন হন তিনি। স্থানীয় পল্লী চিকিত্সক ডা. শফিউল ইসলাম লেবু তাকে চিকিত্সা দেন। কিন্তু চিকিত্সায় সেরে না ওঠায় গত বৃহস্পতিবার পরিবারের লোকজন জ্বর ও সর্দির ওষুধ নিতে ওই চিকিত্সকের বাড়িতে যান। তখন চিকিত্সক তাদের বলেন, সোনাচরণের উন্নত চিকিত্সার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু গতকাল ১১টার দিকে তিনি মারা যান।

কুমিল্লায় করোনা সন্দেহে লকডাউন পরিবারের কৃষকের মৃত্যু

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে করোনা সন্দেহে লকডাউনে থাকা একটি বাড়ির আলেক খান (৫৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার সকালে ঐ উপজেলার মারুকা ইউনিয়নের চক্রতলা গ্রামের নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা সেখানে গিয়ে মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেন এবং দুপুরে তাদের ব্যবস্থাপনায় মৃত ব্যক্তির মরদেহ কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে ঐ ব্যক্তির শরীরে করোনা উপসর্গ সন্দেহে গত শনিবার সাতটি পরিবারকে লকডাউন করে রাখে উপজেলা প্রশাসন।

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. শাহিনুল আলম সুমন জানান, ‘ঐ ব্যক্তি একজন কৃষক। তিনি কাশি ও গলাব্যথা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে আসেন। তখন তাকে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। রবিবার সকালে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে ইউএনও সাহেবের নেতৃত্বে আমরা ঐ ব্যক্তির বাড়িতে যাই এবং নমুনা সংগ্রহ করে তাকে দাফন করা হয়েছে।’

পূর্বধলায় করোনার লক্ষণ নিয়ে নারীর মৃত্যু

নেত্রকোনার পূর্বধলায় রোববার ভোর রাত ৪টার দিকে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ নিয়ে নূরুন্নাহার (৪৫) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নূরুন্নাহার উপজেলার হোগলা ইউনিয়নের কালিহর জোয়ারদারপাড়া গ্রামের রকিব মিয়ার স্ত্রী।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খোকন জানান, গত দুদিন ধরে ঐ নারীর হালকা জ্বর ও কাশি ছিল। হঠাত্ করে শনিবার থেকে শ্বাসকষ্টসহ পাতলা পায়খানা শুরু হয়। এ অবস্থায় রোববার ভোর রাত ৪টার দিকে তার নিজ বাড়িতে মারা যায়। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতের বাড়িসহ আশপাশের বাড়ি লকডাউন করে রাখে। পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে কুলসুম জানান, মৃত ব্যক্তি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন কি না—তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ইতিমধ্যে নমুনা সংগ্রহ করতে চার সদস্যের একটি মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে।

করিমগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে এক জনের মৃত্যু

শনিবার বিকালে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদিরজঙ্গল ইউনিয়নের কুশশাখালি গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের ছেলে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি মো. রনি মিয়া (২৮) মারা গেছে। শনিবার সকালে রনি মিয়া শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ নিয়ে করিমগঞ্জের আ. হামিদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়ে বাড়ি চলে যান। বিকালে নিজ বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রিয়াদ শাহেদ রনি জানান, খবর পেয়ে একটি মেডিক্যাল টিম নিয়ে রনির শরীরে করোনা আছে কি না তা জানার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। করিমগঞ্জের নির্বাহী কর্মকর্তা তসলিমা নূর হোসেন জানান, রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত ঐ পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলেছি।

বাগেরহাটে জামায়াত আমিরের মৃত্যু

বাগেরহাটের রামপালে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রবিবার সকালে মারা যাওয়া উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ নাসের উদ্দিনের (৬০) শ্রীফলতলা গ্রামে তার নিজের ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ যারা মরদেহকে কবর দিয়েছেন ও গোসল করিয়েছেন তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শুকান্ত কুমার পাল জানান, উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ নাসের উদ্দিন শ্রীফলতলায় নিজ বাড়িতে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কয়েক দিন অসুস্থ ছিলেন। রবিবার ভোরে খুলনার একটি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার স্বজনের বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগ বা প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে লাশটি তার জন্মস্থান উপজেলার বর্ণি-সায়েরাবাদ গ্রামে নিয়ে দ্রুত গোসল ও জানাজা শেষে সেখানে দাফনের আয়োজন করতে থাকে। স্বাস্থ্য বিভাগ বা উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত সেখানে পৌঁছলেও লাশ দাফন হয়ে যাওয়ার কারণে মৃতের শরীর থেকে কোনো নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।

ইত্তেফাক/বিএএফ