শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘মোবাইলে আর্থিক লেনদেনে দেড় টাকা বেশি নেওয়া চুরি’

আপডেট : ০৮ মে ২০২১, ২১:০২

মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) হাজার টাকায় ২০ টাকা চার্জ নেওয়ার মাধ্যমে দেড় টাকা করে বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। নির্ধারিত চার্জ ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। বাড়তি এই অর্থ নেওয়া চুরি বা প্রতারণার শামিল।

গতকাল শনিবার ‘প্রতিযোগিতা ও অংশীদারত্বের প্রেক্ষাপট : প্রসঙ্গ এমএফএস’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ (টিআরএনবি) এ সভার আয়োজন করে। 

বক্তারা মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবা, এর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, প্রতিযোগিতা, সেবাগ্রহীতার ব্যয়সহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। তারা এমএফএস সেবায় গ্রাহকের চার্জ কমানোর উদ্যোগ নেওয়ার সময় এসেছে বলেও উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি  ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার প্রতিযোগিতা কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা মনিটরিং করবেন, যেকোনো মূল্যে মনোপলি হতে দেবেন না। মনোপলি হলে তারা মনস্টার হয়ে যায়, তখন তাদের ঠেকানো জরুরি হয়ে পড়ে।’ 

টিআরএনবি আয়োজিত এই ওয়েবিমারে বক্তব্য রাখেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর সিকদার, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর আবুল কাশেম, মোবাইল অপারেটর রবির সিইও মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক বদিউজ্জজামান দিদার, বিআইবিএমের সহযোগি অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান আলম, ডাচ বাংলা ব্যাংকের এমডি ও রকেটের প্রধান নির্বাহী আবুল কাশেম মো. শিরিন, নগদের এমডি তানভীর আহমেদ মিশুক, বিকাশের চীফ কমার্শিয়াল অফিসার মিজানুর রশীদ ও ব্যারিস্টার ইফতেখার জোনায়েদ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে। সঞ্চালক ছিলেন টিআরএনবির সভাপতি রাশেদ মেহেদী।  

হাজারে ২০ টাকা নিয়ে যে, দেড় টাকা করে বাড়তি নেওয়া হচ্ছে এটাকে চুরি ও প্রতারণা হিসেবে উলে­খ করেন শ্যামসুন্দর সিকদার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম। শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, দেড় টাকাকে বছরের মোট লেনদেন নিয়ে গুণ করে দেখুন, কত টাকা বাড়তি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এমএফএস খাতে একচেটিয়া ব্যবসা রয়েছে। এটা ঠেকাতে তাৎপর্যপূর্ণ বাজার ক্ষমতাধারীর ওপর বিধিনিষেধ জারি করা প্রয়োজন। আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ব্যাংকগুলো প্রতি হাজারে দুই থেকে তিন টাকা মাশুল নেওয়া হয়। এর বিপরীতে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবায় মাশুল অনেক বেশি। তানভীর আহমেদ মিশুক বলেন, হাজারে ২০ টাকা বিশ্বে কোথাও নেওয়া হয় না। 

মাহবুবুর রহমান আলম বলেন, সাত হাজারের মতো ব্যবহারকারীর ওপর জরিপ করে তারা দেখেছেন, মানুষ ২০ টাকা চার্জ নিয়ে যতটা না উদ্বিগ্ন তার চেয়ে বেশি বিরক্ত দেড় টাকা বেশি নেওয়ায় কারণে। তিনি বলেন, দেড় টাকা করে বেশি নিয়ে অন্যায় করা হচ্ছে। মিজানুর রশিদ বলেন, মাশুল কমাতে গিয়ে  কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত যাতে না হয়। অপারেটর ও গ্রাহকের জন্য ভালো হবে, এমন কোনো উদ্যোগে বিকাশের সহযোগিতা থাকবে। 

মাহতাব উদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, সেবার মূল্য যত কমবে, তত ব্যবহার বাড়বে। মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবায় ভবিষ্যতে বড় রূপান্তর ঘটবে। তখন ডিজিটাল মুদ্রা আসবে। এজেন্ট ব্যবস্থাও থাকবে না। মোবাইলে আর্থিক সেবার বাজারে আপাতদৃষ্টে একচেটিয়া ব্যবসা হচ্ছে না বলে উলে­খ করে মফিজুল হক বলেন, ‘কেউ বাজার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে, আমরা এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। কমিশনের স্বপ্রণোদিত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। আমরা দেখব।’

মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার একচেটিয়া ব্যবসা ঠেকানোর ওপর জোর দিয়ে বলেন, এটা মুক্তবাজার অর্থনীতির অন্যতম শর্ত। বাজারে প্রতিযোগিতা না থাকলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় তিনি এমএফএস-এ ইন্টারঅপারেবিলিটি না হওয়াকে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলেও উলে­খ করেন। ইন্টারঅপারেবিলিটি কেন দেওয়া যাচ্ছে না, তা নিয়ে তিনি বিষ্ময় প্রকাশ করেন। 

মূল প্রবন্ধে সমীর কুমার দে বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে একটি মোবাইল অপারেটর ৪০ শতাংশের  বেশি বাজার হিস্যাধারী হওয়ায় প্রতিযোগিতার স্বার্থে তার ওপর কয়েকটি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বিটিআরসি। মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবায় একটি প্রতিষ্ঠান ৭০ শতাংশের মতো বাজার হিস্যাধারী। প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে এ খাতেও উদ্যোগ নেওয়া দরকার। 

ইত্তেফাক/এনএ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন