বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ম্যালওয়্যার থেকে কতটা নিরাপদ গুগল প্লে স্টোর

আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০১৯, ০৭:০৯

অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞদের মতে, গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করলে এবং কোনো সাইড লোডিং বা তৃতীয়পক্ষ অ্যাপ স্টোর ব্যবহার না করলে আপনি ম্যালওয়্যার থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন। এতে আপনার অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে ভাইরাস আক্রমণ হবে না। এ বিষয়ে রয়েছে অনেক মতের পার্থক্য। ২০১৮ সালে ফর্বস ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হওয়া একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্লে স্টোরে এক রেসিং গেম মনে করে প্রায় ৫ লাখ ব্যববহারকারী প্লে স্টোর থেকে ভাইরাস ডাউনলোড করেছিল।

চেক পয়েন্ট সফটওয়্যার টেকনোলজি নামের ইসরাইলি একটি সিকিউরিটি ফার্ম ২০১৭ সালের দিকে প্লে স্টোরে লুকিয়ে থাকা এমন কিছু অ্যাপ খুঁজে পায় যেগুলো ব্যবহারকারীদের ফোন থেকে প্রতারণাপূর্ণ টেক্সট মেসেজ সেন্ড করছিল। পরে অবশ্য প্লে স্টোর থেকে সেই ভাইরাস আক্রান্ত অ্যাপগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু প্লে স্টোর থেকে এদের সরিয়ে ফেলার আগেই ২ কোটিবার ডাউনলোড করা হয়েছিল অ্যাপগুলো।

সম্প্রতি দ্য নেক্সট ওয়েবের একটি রিপোর্টের হেডিং ছিল; ‘গুগল প্লে স্টোরে ২০৫টি ক্ষতিকর অ্যাপ খুঁজে পাওয়া গেছে যেগুলো ইতোমধ্যে ৩ কোটির বেশি ডাউনলোড করেছে ব্যবহারকারীরা।

অ্যান্ড্রয়েড বনাম ম্যালওয়্যার

উইন্ডোজ পিসির মতো কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে নিজে থেকেই ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে না। অ্যান্ড্রয়েড ঠিক তখনই আক্রান্ত হতে পারে, যদি আপনি নিজে থেকে ফোনে ম্যালিসিয়াস অ্যাপ ডাউনলোড করে ইন্সটল করে এবং অ্যাপটিকে তার কাজের পার্মিশনগুলো অ্যালাউ করে দেন।

বর্তমানে সাইবার ক্রিমিনালরা আরো বেশি চালাক হয়ে গেছে। তারা কোনোভাবে লেজিট দেখতে লাগা অ্যাপের সঙ্গে ম্যালিসিয়াস কোড এম্বেড করে দেয় এবং অ্যাপটিকে প্লে স্টোরে আপলোড করে দেয় যাতে ব্যবহারকারীরা বিনাদ্বিধায় সেটা ডাউনলোড করে আর পার্মিশনগুলো অ্যালাউ করে দেয়। আপনি বুঝতেই পারবেন না, আপনার ডিভাইসে ম্যালওয়্যার রয়েছে। আপনি হয়তো সাধারণ ফটো এডিটর অ্যাপ ডাউনলোড করেছেন, কিন্তু সেটা আপনার ফোনকে স্লো করা থেকে শুরু করে আপনার পার্সোনাল তথ্যগুলো যেমন— পার্সোনাল ডাটা চুরি, ফোন নম্বর চুরি, ইমেইল অ্যাড্রেস চুরি, আপনার জিপিএস লোকেশন ডাটা আক্সেস, ইত্যাদি নানান টাইপের ম্যালিসিয়াস কাজকর্ম করাতে পারে। আপনার ফোনটি একবার ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করানো গেলে আরো নতুন ম্যালওয়্যার ইন্সটল করানো যেতে পারে সঙ্গে নতুন নতুন অ্যাটাকের জন্য ফোন রেডি হয়ে যায়।

অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরের চেয়ে গুগল প্লে স্টোর বেশি কলঙ্কিত। অ্যাপেলের সিস্টেম অনেক বেশি হার্ড, ডেভেলপারদের অ্যাপ স্টোরে অ্যাপ আপলোড করতে চাইলে অ্যাপেলের অনেক নিয়ম, টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস মেনে কাজ করতে হয়। আপনি যদি একজন ডেভেলপার হন, সেক্ষেত্রে অনেক ব্যাপারে সহমত হওয়ার পরেই আপনার অ্যাপটি অ্যাপেল অ্যাপ স্টোরে পাবলিশ হবে।

অ্যান্ড্রয়েড এর সিস্টেমকে গুগল যতটা সম্ভব ওপেন রাখার চেষ্টা করে। ফলে ডেভেলপাররা সহজেই (অ্যাপ স্টোরের তুলনায় অনেক সহজে) অ্যাপ গুলোকে প্লে স্টোরে আপলোড করার সুবিধা পায়। গুগল তাদের সিস্টেমকে যতটা সম্ভব ওপেন করে রাখতেই হয়, কেনোনা ডেভেলপাররা তৃতীয়পক্ষ অ্যাপ স্টোরে অ্যাপ পাবলিশ করতে পারে বা সাইড লোডিংয়ের ও সিস্টেম রাখতে পারে, এতে গুগল, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপগুলোর উপর থেকে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ হারয়ে ফেলবে। অনেকটা সহজেই অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ প্লে স্টোরে আপলোড করা যায়, ফলে অ্যাপেলের অ্যাপ স্টোরের চেয়ে প্লে স্টোরে ম্যালওয়্যার ছড়ানো অনেক সহজ হয়ে দাঁড়ায়।

গুগলে ম্যালওয়্যার

গুগল তাদের প্লে স্টোরকে ম্যালওয়্যার থেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ২০১২ সালে বাউন্সার নামক একটি অ্যান্ড্রয়েড সিকিউরিটি ফিচার লঞ্চ করে। বাউন্সার গুগল প্লে স্টোরে ম্যালিসিয়াস অ্যাপ খুঁজে বের করে এবং ব্যবহারকারীরা সেটাকে ডাউনলোড করার পূর্বেই প্লে স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলে। কিন্তু যে বছর বাউন্সার উন্মুক্ত হয়েছিল, অ্যাপ স্টোরে ম্যালওয়্যার ইনফেকশন কেবল ৪০% কমানো সম্ভব হয়েছিল।

গুগল পরে একটি বিল্ডইন সিকিউরিটি ফিচার অ্যাড করে ‘প্লে প্রটেক্ট’—কিন্তু বাউন্সারের তুলনায় এতেও বিশেষ করে উন্নতি দেখা যায়নি ম্যালওয়্যার ডিটেক্ট করার ক্ষেত্রে। আলাদা অ্যান্টিম্যালওয়্যার সফটওয়্যারগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায় গুগল প্লে প্রটেক্ট-এর স্কোর সবচাইতে পেছনে আসে। এরপরে ২০১৬ সালের দিকে গুগল মানুষ দ্বারা ম্যানুয়ালভাবে অ্যাপ রিভিউ প্রসেস চালু করে। কিন্তু সাইবার ক্রিমিনালরা দিনের পর নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে আসে আর নতুন নতুন ভাবে ম্যালিসিয়াস অ্যাপগুলোকে সবার নজর এড়িয়ে প্লে স্টোরে আপলোড করে দেয়।

প্লে স্টোর ব্যবহারে যে বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে

গুগল প্লে স্টোরও শতভাগ নিরাপদ নয়। মানে প্লে স্টোর থেকে যে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করবেন আর কিছুই হবে না, এমনটা নয়। কয়েকটি বিষয়ে নিম্নে উল্লেখ করা হলো, যেগুলো অনুসরণ করলে মোটামুটি বেশি নিরাপদ থাকতে পারবেন। প্লে স্টোরে কেবল নামি পাবলিশারদের থেকেই অ্যাপ ডাউনলোড করুন। ডাউনলোড করার পূর্বে অবশ্যই লক্ষ্য করে দেখুন কোন ডেভেলপারের অ্যাপ ডাউনলোড করছেন। আপনার ব্যাংকের অ্যাপ হলে চেক করুন সেটার পাবলিশার আপনার ব্যাংক নিজেই না অন্য কেউ। গুগল প্লে স্টোর শতভাগ নিরাপদ নয়। কিন্তু আন-অফিসিয়ালভাবে অ্যাপ ডাউনলোড করা বা সাইড লোডিং করার থেকে এটা এখনো বেশি নিরাপদ।

যে কোনো নতুন অ্যাপ ডাউনলোড করার আগে অবশ্যই একটু সময় নিয়ে-এর রিভিউগুলো পড়ে ফেলবেন। আসল ব্যবহারকারীরা কি মন্তব্য করেছে। অ্যাপটি সত্যিই কতটা কাজের বা এতে কি টাইপের সমস্যা রয়েছে সেগুলো ইউজার রিভিউ থেকে ধারণা পেতে পারবেন।

যদি বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান সেক্ষেত্রে ভালো অ্যান্টিভাইরাস যেমন— মোবাইল সিকিউরিটি ব্যবহার করতে পারেন। অনেক ফোনের সাথে এগুলো বিল্ডইনভাবেই ইন্সটল করা থাকে। আর একটি বিষয় হলো— আপনি যদি অ্যান্ড্রয়েডে নিরাপদ থাকতে চান তাহলে আপনার ফোনটি কখনোই রুট করবেন না।

ইত্তেফাক/এসআর 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন