এক বাদাম বিক্রেতা

ছেলেবেলায় পাঁচ-দশ টাকা নিয়ে স্কুলে যেতাম। টিফিনের সময় মনোহরি খাবারের তালিকায় ছিল চিনা বাদামও। সেই অতীত স্মৃতি মনে পড়ছে বাদাম কিনতে গিয়ে। বাদাম বিক্রেতার ইসহাক মিয়ার সুখ-দুঃখের কথাও কিছু জানা হলো।
১৯৯৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার রাজপুর গ্রাম থেকে সোনারগাঁ আসেন জীবন ও জীবিকার তাগিদে। এরপর পথে পথে, বাজার-বন্দরে হাতে চালানো ভ্যানগাড়ির ওপরে ছোট্ট চুলায় গরম বালুর মধ্যে ভেজে চিনা বাদাম, ভুট্টা, ছোলা, ডাবলি, সিমের বিচি, হেঁটে-হেঁটে বিক্রি করা শুরু হয়। এভাবে চার বছর ব্যবসার পর যখন আয়-রোজগার ভালো হতে থাকে, তখন ছোটভাই ইদ্রিস ও কুদ্দুছকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসে এতে লাগিয়ে দেন। আয়ও বাড়ে অনেকগুণ।
এক সময় দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোগাতে নিদারুণ কষ্ট করতে হতো। এখন বাদাম বিক্রি করে জায়গা-জমির মালিকও হন। তিনি তাঁর বড় তিন ভাইয়ের কাছে কেনাবেচা ও পথচলা মানুষকে মুগ্ধ করার কৌশল শেখেন। বড় তিন ভাইয়ের ইচ্ছে ছিল ইসহাক পড়াশোনা করে মানুষের মতো মানুষ হয়ে মাথা উঁচু করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু তা না হলেও জীবন থেমে থাকেনি।
আরও পড়ুন: ভালো কাজের হোটেল
মা, স্ত্রী, পুত্রকন্যা নিয়ে ভালোই আছেন। সন্তানেরা বিদ্যালয়ে পড়ছে।
দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে বাদাম বিক্রি করছেন। বেচা-বিক্রি ভালো হয় চার মাস। আর ছয় মাস যেমন-তেমন। দিন শেষে যখন পাঁচ, দশ টাকা থেকে ১০০, ২০০, ৫০০ টাকা গুনতে থাকেন, তখন সারা দিনের ক্লান্তি, দুঃখ, কষ্ট আর মনে আসে না।
সোনারগাঁ উপজেলার আমিনপুর এলাকায় বসবাস। সহজ প্রকৃতির মানুষ। যে কোনো মানুষকে হাসিতে বরণ করে নেন—এটাই মূলধন।
ইত্তেফাক/এমআর