শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আকবরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র  ফরেনসিকে পাঠাবে পিবিআই

আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২০, ২৩:০৭

সিলেটে রায়হান হত্যার প্রধান আসামি এসআই (বরখাস্তকৃত) আকবর হোসেন ভুঁইয়ার মোবাইল ফোন, সিমকার্ড ও জামা-কাপড় ও তার জিনিসপত্র ফরেনসিক বিভাগে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গত ৯ নভেম্বর  সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ডোনা সীমান্ত থেকে তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। এগুলো প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছে পিবিআই। তবে অধিকতর নিশ্চিত হতে চায় পিবিআই।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার খালেদ উজ জামান জানান, উদ্ধারকৃত জিনিসপত্র আকবরেরই।

এসআই আকবরের উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড রায়হান হত্যায় কিংবা পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল কী-না, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষা সহায়ক হবে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তা খালেদ উজ জামান।

পুলিশ জানিয়েছে, রায়হান আহমদ হত্যার ঘটনায় পলাতক ছিলেন এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়া। ঘটনার ২৯ দিন পর গত ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর গত ১৯ নভেম্বর রাতে ওই একই এলাকা থেকে আকবরের দুটি মুঠোফোন, তিনটি সিমকার্ড, শার্ট-প্যান্ট  ও গেঞ্জি, ২০ টাকার একটি নোট, তার দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং এক মহিলার দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি উদ্ধার করা হয়। কানাইঘাট থানার ওসি মো. শামসুদ্দোহা ও জকিগঞ্জ থানার ওসি মীর মো. আবদুন নাসের এসব জিনিসপত্র উদ্ধারে নেতৃত্ব দেন। সেখানে একটি পাহাড়চূড়ায় কালো ব্যাগের মধ্যে এসব জিনিসপত্র রাখা ছিল।

উদ্ধারকৃত জিনিসপত্র রায়হান হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। পরে এসব জিনিসপত্র আসলেই আকবরের কী-না, তা খতিয়ে দেখার উদ্যোগ নেয় পিবিআই। 

গত ১০ অক্টোবর রাতে নগরীর নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে রায়হান আহমদকে ধরে নেওয়া হয় বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে। ১১ অক্টোবরে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ভর্তি করা হয় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে মারা যান রায়হান। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে আহত হন রায়হান, পরে হাসপাতালে তিনি মারা যান।

কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। বলা হয়, ফাঁড়িতে নির্যাতনে মারা গেছেন রায়হান। রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নী বাদী হয়ে ১২ অক্টোবর নগরীর কোতোয়ালী থানায় হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে মামলা করেন।

নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এ কমিটি অনুসন্ধানে ফাঁড়িতে নির্যাতনের সত্যতা পায়। ১২ অক্টোবর ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভুঁইয়াসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর থেকে লাপাত্তা হয়ে যান আকবর। তাকে গ্রেফতারে আন্দোলন দানা বাঁধে সিলেটে। ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ ইউনিয়নের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকে আকবরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পিবিআই তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইলে আদালত সাত দিনের রিমান্ডই মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড শেষে ১৭ অক্টোবর আকবরকে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি, মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআইও নতুন করে রিমান্ডের আবেদন করেনি। ফলে আদালত আকবরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

রায়হান হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত  এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস, হারুনুর রশিদকে দুই দফায় আট দিন করে এবং এএসআই আশেক এলাহীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে তারা এখন কারাগারে। এদিকে, রায়হানকে ছিনতাইকারী হিসেবে অভিযোগকারী শেখ সাইদুর রহমানকে গত ১৫ নভেম্বর প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার দেখায় পিবিআই। পরে তাকেও নেওয়া হয় তিনদিনের রিমান্ডে।

ইত্তেফাক/ইউবি