বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘আমি বাবলু শেখ, শ্রী বাবু না’

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০১:২৩

পুলিশের অসতর্কতার কারণে এক আসামির সাজায় ৫৯ দিন হাজত খেটেছেন অন্য এক ব্যক্তি! নাটোরের মুখ্য বিচারিক হাকিম একটি মারামারির মামলায় সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের শ্রী দেবদাসের ছেলে শ্রী বাবুকে দুই বছরের দণ্ডাদেশ দেন। কিন্তু তার পরিবর্তে কারাগারে পাঠানো হয় ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখ নামের একজন চা-বিক্রেতাকে।

ভুক্তভোগী বাবলু শেখ বলেন, ‘আমি বাবলু শেখ, শ্রী বাবু না। আমি একজন নিরীহ ও সহজ-সরল মানুষ। অন্য আসামিদের সঙ্গে দিনের পর দিন আদালতে হাজিরা দিয়েছি। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় আইনজীবীর মাধ্যমে আমার ভোটার পরিচয়পত্র আদালতে জমা দিয়ে বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু তাতেও সমাধান পাইনি। তাই বিনা অপরাধে দুই বারে ৫৯ দিন কারাভোগ করেছি।’

আদালতের নথিপত্র ও বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাজী আবদুল মালেক বাদী হয়ে শ্রী বাবুসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় ১৮/০৪/২০০১ তারিখে একটি মামলা করেন। মামলার নম্বর ১৪। তত্কালীন নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে ১৫/০৫/২০০১ তারিখে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। পরবর্তীকালে একই বছরের ২৮শে ডিসেম্বর পুনরায় শ্রী বাবুকে অভিযুক্ত করে সদর থানার উপপরিদর্শক হেলেনা পারভীন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। মামলার এজাহারে উল্লিখিত আসামি বাবুকে গ্রেপ্তার না করে ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখকে ২০০২ সালের ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এই ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করে ছয় দিন পর ১৩ নভেম্বর আসামির আইনজীবী বাবু পরিচয়েই বাবলু শেখের জামিন করান। পরে ওই পরিচয়েই বাবলু শেখের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য গ্রহণ ও আসামি পরীক্ষা হয়। যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৬ সালের ২৩ জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আসামি বাবুর বিরুদ্ধে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই দিন কাঠগড়া থেকে বাবলু শেখকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি ১৬/০৮/১৬ তারিখে আপিলের মাধ্যমে জামিনে বের হন।

আরো পড়ুন: স্বামী বাসর ঘরে ঢুকে দেখলেন স্ত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা

এদিকে মূল ঘটনা জানতে যাওয়া হয় সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে। কথা হয় মামলার বাদী কাজী আব্দুল মালেকের স্ত্রী ওলেগান বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, তার স্বামী প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। তিনিসহ পরিবারের সবাই জানে এ মামলার কার্যক্রম এত দিনে স্থগিত হয়ে গেছে। একই গ্রামের বাসিন্দা ও এ মামলার সাক্ষী নবীউল্লাহ বলেন, ‘শ্রী বাবু নামের কেউ এলাকায় নাই। তবে যে বাবলু শেখকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল এ মামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই।’

বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবী শামীম উদ্দিন বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী দুই জন কর্মকর্তা ও আগের আইনজীবীর গাফিলতির কারণে বিনা দোষে কারাভোগ করতে হয়েছে বাবলু শেখকে। তিনি পরবর্তী শুনানিতে (আপিল) খালাস পাবেন বলে আমি আশাবাদী।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক আগের বিষয়, না জেনে বলতে পারছি না। খোঁজখবর নিয়ে পরে বলতে পারব।’

ইত্তেফাক/বিএএফ