শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১০ দিনে হেঁটে ২ হাজার কিলোমিটার!

আপডেট : ০২ জুন ২০২০, ০২:৪৭

রাজেশ চৌহান (২৬)। ভারতের উত্তরপ্রদেশের এই যুবক কাজ করেন সাড়ে ১২ হাজার মাইল দূরের (২ হাজার কিলোমিটার) শহর বেঙ্গালুরুতে। ভারতে লকডাউন ঘোষণার পর সব ধরনের যানবাহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজেশের মতো অনেক অভিবাসী শ্রমিক আটকে পড়েন। লকডাউনের কারণে কাজও বন্ধ হয়ে যায় বেশির ভাগের। এদেরই এক জন রাজেশ। যানবাহন বন্ধ থাকায় রাজেশ পরিকল্পনা করেছিলেন পায়ে হেঁটেই ফিরবেন বাড়িতে! শেষ পর্যন্ত মাত্র ১০ দিনে এই অসাধ্য সাধন করেছেন রাজেশ।

পায়ে হেঁটে রওয়ানা দেওয়ার সময় তার পরিকল্পনা ছিল সুযোগ হলে ট্রাকে করেও কিছু পথ পাড়ি দেবেন। দুই এক জন ট্রাকচালকের সঙ্গে কথাও হয়েছিল। কিন্তু তারা যে ভাড়া চেয়েছিল সেই পরিমাণ পয়সা তার কাছে ছিলই না। অগত্যা নিজের পায়ের ওপরই ভরসা করতে হয়েছে তাকে। আর এই ১০ দিনের যাত্রায় শুধু বিস্কুট আর চা খেয়েই বাঁচতে হয়েছে। অনেক জায়গায় পুলিশের চেকপোস্টের কারণেও ঝামেলায় পড়তে হয়েছে অভিবাসী শ্রমিকদের। তাকে তাদের চোখও ফাঁকি দিতে হয়েছে কখনো কখনো। প্রথম পাঁচ দিনেই রাজেশ পায়ে হেঁটে ১ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেন। এই পাঁচ দিনেই তার পা ফুলে ওঠে, ফোসকা পড়ে অনেক জায়গায়।

গত ২৪ মার্চ সরকার ভারত জুড়ে লকডাউনের ঘোষণা দিলে স্থবির হয়ে যায় গোটা দেশ। রাজেশের মতো কর্মহীন, সঞ্চয় ফুরিয়ে ১ কোটির বেশি অভিবাসী শ্রমিক অসহায় হয়ে পড়ে। তার এমন কাজ দেখে অনেকেই হয়তো এটিকে পাগলামি বলে আখ্যায়িত করতে পারেন, অনেকে এটিকে রোমাঞ্চকর এক যাত্রাও মনে করতে পারেন। কিন্তু এই যাত্রা যে কত কষ্টের, কত হতাশার তা কেবল রাজেশই অনুধাবন করতে পেরেছেন। নিজের এমন অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রাজেশের প্রতিক্রিয়া, আমার মনে হয় না, আমি এই যাত্রার কথা জীবনে কখনো ভুলতে পারব। এই যাত্রা সব সময় আমার হতাশা আর উত্কণ্ঠার এই স্মৃতিকে স্মরণ করিয়ে দেবে।

আরও পড়ুন: বিশ্ব খাদ্য সংস্থার শুভেচ্ছা দূত তামিম

নেপাল সীমান্তে ত্রিভুবন নগরে যখন থাকতেন তখন তার আয় ছিল দৈনিক ২৫০ রুপি; এই আয়কে দ্বিগুণ করতেই গত ডিসেম্বর বেঙ্গালুরুতে একটি নির্মাণ কোম্পানিতে চাকরি নেন। অভাবের কারণেই তাকে পরিবার ছেড়ে এত দূর গিয়ে কাজ করতে হয়। বেঙ্গালুরু থেকে সব থেকে কম ভাড়ার গাড়িতে তার বাড়িতে যেতে সাধারণত ৩০০ রুপির দরকার হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে যখন তা ১ হাজার ২০০ রুপি হয়ে গেল তখন যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে রাজেশের। এরপর গ্রামের কয়েকজন মিলে সিদ্ধান্ত নেয় পায়ে হেঁটেই রওয়ানা দেবেন বাড়ির পথে। ১২ মে চারটি জামা, একটি তোয়ালে, একটি বিছানার চাদর, কয়েক বোতল পানি এবং মানিব্যাগে ১৭০ রুপি নিয়ে বাড়ির পথে পা রাখে রাজেশ। ১০ দিনের এই অমানুষিক যাত্রা শেষে বাড়ি ফিরে সন্তানদের কোলে তুলে নিতেই সব কষ্ট ভুলে যান রাজেশ। যদিও এরপর ১৪ দিনের জন্য একটি সেন্টারে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে তাদের।—সিএনএন