শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এক সপ্তাহে অদৃশ্য বিশাল এক নদী

আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:১৬

আন্দেজ পর্বতমালায় উত্পত্তি, তারপর কলম্বিয়ার উর্বর জমির ভেতর দিয়ে এঁকে-বেঁকে এই নদী চলে গেছে ক্যারিবীয় সাগর পর্যন্ত। কাউকা নদী এক হাজার ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ, একটা পর্যায়ে এটি এসে মিশেছে ম্যাগডালেনা নদীর সঙ্গে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে কাউকা নদীর ওপর রয়েছে অনেক হাইড্রোইলেকট্রিক বাঁধ। নদীর একটা জায়গায় একটা বিরাট বাঁধ দেওয়া হচ্ছিল। এই বাঁধ নির্মাণের সময় সেখানে একটা বড় ত্রুটি দেখা দিল। সেটির কারণে ভাটিতে হঠাত্ বন্যা হলো। হাজার হাজার মানুষ সেই বন্যায় তাদের বাড়ি-ঘর ছাড়তে বাধ্য হলো। কিন্তু এরপর যা ঘটল তা বেশ নাটকীয়। এই বিরাট নদী যেন উধাও হয়ে গেল। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাউকা নদীর পানি এতটাই শুকিয়ে গেল যে, স্থানীয় হাইড্রোলজিস্টরা বলছেন, তারা এই নদীর পানিও আর মাপতে পারছেন না।

কাউকা নদীর পানি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য তারা প্রথমে তিনটি টানেল তৈরি করে। কিন্তু গত বছরের মে মাসের শুরু থেকে সেখানে সমস্যা দেখা দেয়। ৭ই মে সেখানে পানি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য তৈরি টানেলের কাছে একটি বিরাট খাদ তৈরি হয়। একই সঙ্গে ভূমিধস শুরু হয়। ফলে টানেলগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে যায়। পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাঁধের অপর পাশে পানির চাপ বাড়তে থাকে। এই চাপ কমানোর কোনো উপায় তখন আর ছিল না। ফলে পুরো জলাধার পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

দশদিন পর প্রচণ্ড পানির চাপে একটি টানেলের মুখ আবার খুলে যায়। হিড্রোইটুয়াংগো বাঁধের সমস্যা আরও জটিল রূপ নিল। পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হলো। বাঁধের উপরের দিকটায় অনেক পলি জমল। ফলে নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে বাঁধের উপর দিয়ে পানি উপচে পড়তে লাগল। পুরো বাঁধটি তখন দুর্বল হয়ে গেল।

আরও পড়ুন: ইউক্যালিপটাসের থাবায় বিপন্ন প্রকৃতি-পরিবেশ

প্রকৌশলীরা আশঙ্কা প্রকাশ করলেন যে, পুরো বাঁধটি এখন ধসে পড়তে পারে। কীভাবে এই বাঁধের ধস ঠেকানো যায়, তখন থেকে সেটিই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পেতে লাগল। যেহেতু টানেলগুলোর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে ভূমিধসে, তাই নদীর পানি ছাড়ার উপায় একটাই। তাহলো জলাধারের উচ্চতায় পানি পৌঁছানোর পর কিছু ফ্লাডগেট তৈরি করে সেখান দিয়ে এই পানি ছাড়া। কিন্তু যখন শুকনো মৌসুম শুরু হলো, তখন পানির উচ্চতা নেমে গেল অনেক নীচে। ফলে নদীর অপরপাশে পানি ছাড়ার কোনো উপায় আর রইল না। পানি কমতে থাকায় এ বছরের ১৬ই জানুয়ারি অপরপাশে অবমুক্ত করার পানির পরিমাণ নেমে আসল প্রতি সেকেন্ডে মাত্র ৩৯৫ কিউবিক মিটারে। আর ৫ই ফেব্রুয়ারি একদম বন্ধ হয়ে গেল পানির স্রোত। যেখানে একসময় ছিল এক প্রমত্তা নদী, সেখানে এখন কেবল পাথর আর কাদা। হাজার হাজার মাছ সেখানে পানির অভাবে ছটফট করছে।

ইত্তেফাক/আরকেজি