২১ নভেম্বর পালিত হবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স)। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল আখেরি নবী মুহাম্মদ (স) জগতে আগমন করেন এবং এই একই দিনে তিনি বিদায় গ্রহণ করেন। বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়সহ শান্তিকামী প্রত্যেক মানুষের কাছে দিনটি অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। নবী (স)-এর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাঁর প্রত্যেকটি কাজ আমাদের জন্য অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সূরা আহযাবের ২১তম আয়াতে ইরশাদ ফরমান— ‘নিশ্চয় তোমাদের জন্য আমার রাসূলের মধ্যে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।’ নবী করিম (স) এর আদর্শ কেমন ছিল সে সম্পর্কে শামায়েলে তিরমিযীতে এসেছে—তিনি যখন ঘরে প্রবেশ করতেন তখন হাসিমুখে আনন্দচিত্তে প্রবেশ করতেন। ঘরের বাসিন্দাদের সালাম দিতেন। সহীহ্ আল-বুখারীতে এসেছে— নবীজী (স) এমনভাবে থেমে থেমে কথা বলতেন, যেন শ্রোতা সহজেই তা বুঝতে পারেন ও স্মরণে রাখতে পারেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ বাক্য দু’বার বলতেন। হযরত আলী (রা) বলেন, একবার উম্মে হুসাইন আমার কাছে নবীজীর আখলাক ও স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে আমি বললাম— নবীজী (স) ছিলেন প্রফুল্লচিত্ত, নম্র মেজাজের, তাঁর চেহারা মোবারকে সদা হাসি ফুটে থাকত। কিন্তু দিল সবসময় আল্লাহ’র ধ্যানে মগ্ন থাকত। তিনি কঠিন প্রাণ ও কঠোর মেজাজের ছিলেন না। তিনি শোরগোল পছন্দ করতেন না, তাঁর অপছন্দের কথা তিনি শুনতেও চাইতেন না। কেউ তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থী হলে তাকে তিনি নিরাশ করতেন না।
রাসূলুল্লাহ (স) ছিলেন ব্যক্তিত্ব সচেতন। তিনি তিনটি বস্তুকে নিজ থেকে দূরে রাখতেন— ‘অতিরিক্ত কথা বলা, উদ্দেশ্যবিহীন অপ্রয়োজনীয় কথা বলা এবং তর্ক করা।’ অন্যের জন্যও তিনি তিনটি বিষয় অপছন্দ করতেন— কাউকে খারাপ বলা, কারো দোষ চর্চা করা এবং কারো অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। নবীজী ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা, সত্যবাদী, বিনম্র এবং সদাচারী। যে খাবারই তাঁর সামনে পেশ করা হতো তিনি তা গ্রহণ করতেন। খাদ্যের দোষ-গুণ তিনি বর্ণনা করতেন না। যদি কোনো সত্য কাজের বিরোধিতা করা হতো তিনি রাগান্বিত হতেন। কিন্তু নিজের ব্যাপারে কারো প্রতি তিনি গোস্বা করতেন না। এমনকি কারো অন্যায়ের প্রতিশোধও তিনি গ্রহণ করেননি। অন্যদিকে নবীজীর চেয়ে বেশি অতিথি আপ্যায়নকারী কেউ ছিলেন না। বায়হাকী শরীফে এসেছে—একবার বাদশাহ্ নাজ্জাশীর একটি প্রতিনিধিদল নবীজীর কাছে এলেন। তিনি নিজেই তাঁদের আপ্যায়ন করলেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদেরকে কিছু করতে দিন। নবীজী বললেন, এই লোকজন আমার বন্ধুদেরকে খুব আপ্যায়ন করেছেন, এজন্য আমাকেই তাদের সেবা করতে দাও।
প্রতিবেশী ও সঙ্গী-সাথীদের তিনি কষ্ট দিতেন না। কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতেন না। নিঃশব্দে দরজা খুলতেন। বাইরের প্রয়োজন সেরে আবার আস্তে করে ঘরে প্রবেশ করতেন। হাঁটার সময় নবীজীর দৃষ্টি নিচের দিকে থাকত। সর্বদা তিনি আল্লাহ’র ভয়ে ভীত থাকতেন। এজন্যই অধিকাংশ সময় তাঁকে নিরব থাকতে দেখা যেত।
lলেখক:আজিমপুর দায়রা শরীফের বর্তমান সাজ্জাদানশীন পীর ও মুতাওয়াল্লী