কবর খোঁড়া হয়েছে। তবে লাশ দাফনের জন্য নয়। মুখ বেঁধে কবরে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে জীবন্ত মানুষকে। দাফনের আনুষ্ঠানিকতা মেনে রীতিমতো মাটিচাপা দেওয়াও হয়েছে। এইবার দেখানো হবে যাদু। উৎসুক জনতার চোখ তখন কবরের দিকে। হঠাৎ পাল্টে গেল জাদুকরের সুর।
উপস্থিত উৎসুক জনতার উদ্দেশ্যে জাদুকর বললেন, ‘যা আছে আনুন, নইলে বাঁচানো যাবে না ভেতরের মানুষকে। মানুষটি মরে গেলে এই এলাকার কেউই বাঁচবে না।’
যাদুকরের মুখে ভয়ঙ্কর এমন কথা শুনে আশেপাশের মানুষরা তড়িঘড়ি করে আনা শুরু করলেন যার কাছে যা আছে। কেউ নগদ টাকা, কেউ ধান, কেউ কাপড় এনে ওই কবরের সামনে রাখা শুরু করলেন। ঠিক এমন সময় পাশ দিয়ে ফোর্সসহ যাচ্ছিলেন বাগাতিপাড়া থানার এসআই খাইরুল ইসলাম। মানুষের ভিড় ঠেলে কাছে গিয়ে দেখেন মৃত্যুর অভিনয় করিয়ে অভিনব কৌশলে করা হচ্ছে প্রতারণা।
মঙ্গলবার বিকেলে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের রহিমানপুরে বাদশা নামক এক ব্যক্তির বাড়ির সামনে অদ্ভুত এ প্রতারণার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কথিত জাদুকর পরিচয়ের তিন প্রতারককে আটক করেছে পুলিশ।
তারা হলেন- রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী ইউনিয়নের নুরনগর গ্রামের মৃত মোসলেম দারোগার ছেলে মনোয়ার হোসেন(৩৩), একই গ্রামের মৃত পিয়ার আলীর ছেলে পলাশ (২৯) ও ঝিনাগ্রামের মাসুদ আলীর ছেলে সেলিম হোসেন (৩২)।
আটক তিনজনই বাঘা থানার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে বাঘা থানায় পলাশের বিরুদ্ধে ৫টি ও মনোয়ারের বিরুদ্ধে ২টি মাদক মামলা রয়েছে।
বাগাতিপাড়া থানার এসআই খাইরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকেলে রহিমানপুর থেকে ফেরার সময় বাদশা নামের এক ব্যক্তির বাড়ির সামনে জনতার ভিড় দেখতে পাই। কাছে গিয়ে দেখি সেলিমকে কবরে শুইয়ে রেখে মাটি চাপা দিয়েছেন মনোয়ার ও পলাশ। কথামতো সাহায্য না করলে সেলিমের মৃত্যু হবে এবং সেলিমের মৃত্যু এলাকাবাসীর জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে বলে তারা উপস্থিতি জনতাকে জিম্মি করে টাকাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছিলো।
আরো পড়ুন: অনলাইনে মোবাইল অর্ডার দিয়ে মিলল কাপড় কাচার সাবান
এসআই আরো জানান, পুলিশ এসময় কবর থেকে জীবন্ত সেলিমকে উদ্ধার করে সুস্থ করে এবং প্রতারণার অভিযোগে থানায় নিয়ে আসে।
বাগাতিপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ সিরাজুল ইসলাম শেখ পিপিএম জানান, কী কারণে তারা এমন অদ্ভুত প্রতারণা চালাচ্ছিল তা জানতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ইত্তেফাক/জেডএইচ