বাজেট পর্যালোচনায় অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজ
ইত্তেফাক রিপোর্ট
প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পদ পুনর্বণ্টনের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দিকনির্দেশনা নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন অধিকারভিত্তিক নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখিত রাজস্ব আহরণ কৌশল গতানুগতিক এবং কোভিড মহামারিজনিত দারিদ্র্য মোকাবিলার ক্ষেত্রে তা অপর্যাপ্ত। গতকাল অনলাইনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিমত ব্যক্ত করেন তারা। ইক্যুইটিবিডি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সম্মেলনে দেশে থেকে অবৈধ অর্থ পাচার বন্ধ এবং অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক সংস্কারের দাবি জানানো হয়।
মূল বক্তব্যে ইক্যুইটিবিডির আহসানুল করিম বলেন, সরকার এনবিআরের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের এবং গ্রামীণ অঞ্চলে কর ও ভ্যাট জাল সম্প্রসারণের প্রস্তাব করেছে। কিন্তু করোনার মহামারিজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রমবর্ধমান ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং আয় কমে যাওয়ার চাপ সামাল দেওয়ার কৌশল প্রস্তাবিত বাজেটে নেই। বেকারত্ব বৃদ্ধির এই সময়ে সুষম সম্পদ পুনর্বণ্টনের দৃষ্টি থেকে এই বাজেট ন্যায়বিচার করতে পারছে না। সরকারের উচিত দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবিকার চাপকে সহজ করে তুলতে অন্তত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর ওপর থেকে ভ্যাটের বোঝা কমিয়ে আনা।
তিনি আয়োজকদের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরে বলেন, আন্ডার ইনভয়েসিং এবং অবৈধ অর্থ পাচার রোধে আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, আয়কর সংগ্রহকে শক্তিশালী করতে আধুনিক প্রযুক্তিগুলোর সঙ্গে এনবিআরকে সমৃদ্ধ করা, গরিব এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কমপক্ষে ১০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যকে ভ্যাট অব্যাহতি ঘোষণা করা, কর্মহারাদের জন্য বিশেষ ভাতা বা সরাসরি আর্থিক সহযোগিতা, সরকারি অফিসগুলোতে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, বিশেষ করে সরকারি ক্রয়পদ্ধতিতে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।
সুশাসনের প্রচারাভিযান (সুপ্র)-এর মো. আবদুল আউয়াল বলেন, যে সরকারের উন্নয়ন দর্শন এবং বাজেট পরিকল্পনা কোনোভাবেই দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে না। কর ফাঁকি দেওয়া এবং অর্থ পাচারে সম্পৃক্ত ধনীদের বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং প্রথমে কর ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করা দরকার, সরকারকে এনবিআরের সঙ্গে সেই লক্ষ্যেই কাজ করা প্রয়োজন।
কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যাকশন নেটওয়ার্কের হাসান মেহেদী বলেন, দেশের ঋণের বোঝা এখন জিডিপির প্রায় ৪০ শতাংশ এবং প্রস্তাবিত ঋণ গ্রহণের ফলে বোঝা আরো বাড়বে। স্বাস্থ্যখাত গত অর্থবছরে ঋণের মাধ্যমে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা পেলেও করোনার সংকট মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়েছে। কোস্ট ট্রাস্টের সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, অবৈধ অর্থ পাচারের অন্যতম সহযোগী ব্যাংক খাত। আর তাই অবৈধ অর্থ পাচার প্রতিরোধে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক সংস্কার প্রয়োজন। অতি মুনাফারোধে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুষম প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ইক্যুইটিবিডির প্রধান রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন মো. মোস্তফা কামাল আকন্দ প্রমুখ।