পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার একই দিনে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। সকাল ও বিকেলে নেওয়া হয় এসব পরীক্ষা। একই দিনে একাধিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা পড়ায় বিপাকে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা। এর সাথে যুক্ত হয়েছে পরিবহন ধর্মঘট। ধর্মঘটে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা।
এদিন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে গণপরিবহন বন্ধ রাখেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তাদের ধর্মঘটের কারণে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি বেশ কিছু শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে সারাদেশে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আহুত ধর্মঘটের কারণে ভোগান্তির মাধ্যমে শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা। প্রথম দিনের ভর্তি পরীক্ষায় অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত হতে পারেননি। শেষ সময়ে এসে কেন্দ্রের সামনে ভোগান্তিতে পড়েন কিছু শিক্ষার্থী। শুক্রবার সকাল ১০টায় সাত কলেজের বাণিজ্য ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়, চলে বেলা ১১টা পর্যন্ত।
গতকাল ঢাকা কলেজ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই কেন্দ্রের সামনে ভিড় করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় শিক্ষার্থীদের বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত যানবাহন, রিকশা, সিএনজিতে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপস্থিত হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের গুণতে হয়েছে স্বাভাবিক ভাড়ার চাইতে কয়েকগুণ বেশি অর্থ।
পরীক্ষায় অংশ নিতে মিরপুর থেকে আসা পরীক্ষার্থী মাসুম হোসেন বলেন, পরিবহন ধর্মঘট থাকায় ভোরেই বাসা থেকে বের হয়েছি। সঠিক সময়ের আগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পেরে ভালো লাগছে। তবে পুরোটা পথ রিকশায় আসতে হয়েছে। রাস্তায় বের হয়ে রিকশা-সিএনজি কিছুই পাচ্ছিলাম না। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটা সিএনজি নিয়ে এখানে আসি। ভাড়াও বেশি।
এদিকে পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘পরীক্ষায় উপস্থিতি ভালো হয়েছে। এটি ঠিক গণপরিবহনের কারণে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করেছি। গণপরিবহনেও যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়। আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের টার্গেট ফিলাপ করার জন্য অনেক বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হয়। কিন্তু এটি সত্ত্বেও তারা সেটি ওভারকাম করতে পারে। সেই শক্তি এবং সাহস আমাদের শিক্ষার্থীরা রাখে।’
সাত কলেজের সমস্যার বিষয়ে তিনি বলেন, সাত কলেজের সমস্যাগুলো সমাধানে আমাদের বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। আমরা সমস্যাগুলো নিয়ে আরও মনোযোগী হচ্ছি। আমাদের কিছু জটিলতা নিরসন হয়েছে। বাকিগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। আশা করছি, সাত কলেজে আর কোনো ধরনের জটিলতা থাকবে না।
গণপরিবহন ধর্মঘটের কারণে পরীক্ষায় প্রভাব পড়ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন নানা কারণে যদি পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয় সেটি আরেকটি ভোগান্তি নিয়ে আসবে। কারণ এখন শিক্ষার্থীরা একটা মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে। এমন প্রতিকূলতা বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সামনের দিকে যেতে হবে।
অধিভুক্ত সাত কলেজের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ শনিবার এবং ১৩ নভেম্বর কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল চাকরিপ্রার্থীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। আজিজ নামে এক চাকরিপ্রার্থী জানান, শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা। সিট পড়েছে নিউমার্কেট এলাকায়। উত্তরায় বড় ভাইয়ের বাসায় থাকেন। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়েও বাস পাননি তিনি। ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল বা অন্য পরিবহনও পাননি। ফলে এই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি তিনি।
বাস বন্ধ থাকায় চাপ বেড়েছিল অটোরিকশার ওপর। তবে কয়েকলাখ চাকরিপ্রার্থী হওয়ায় সবাই অটোরিকশা পাননি। অনেকে রিকশায় চড়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করে। বাস বন্ধ থাকায় অনেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছান।
গতকাল ১৯টি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ছিল যার বেশিরভাগই হয় ঢাকায়। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের তিনটি পদের ব্যবহারিক বাদে বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। খাদ্য অধিদপ্তরে পরীক্ষা দেশের আট বিভাগীয় শহরে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ)। শ্রম আদালত সিলেটের পরীক্ষা হয় সিলেটে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়ার পরীক্ষা হয় বগুড়ায়। আর বাকি সব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।