শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ই-কমার্স খাতে আস্থা ফিরাইয়া আনিতে হইবে

আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০৮:৪৩

তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে সমগ্র বিশ্বেই ই-কমার্স (ই-বাণিজ্য) একটি অতি পরিচিত নাম। বিশেষ করিয়া করোনা মহামারিকালীন বিশ্বব্যাপী ই-কমার্সের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়িয়াছে। উন্নত বিশ্বে ই-কমার্সের যাত্রা নব্বইয়ের দশকের দিকে শুরু হইলেও বাংলাদেশে ই-কমার্সের সূচনা ঘটে মাত্র এক দশক পূর্বে; তাহা সত্ত্বেও ইহার প্রসার ও জনপ্রিয়তা কোনো অংশে কম নহে। 

সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য হইতে শুরু করিয়া ইলেকট্রনিকস, গাড়ি, মোটরসাইকেল ইত্যাদি কিনিতেও নির্ভর করিতেছে ই-কমার্স সাইটগুলির উপর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলির নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এই খাতের উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটিকে নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্ত করিয়াছে। ই-কমার্সের প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা ও আস্থার সুযোগ লইয়া কিছু মুনাফালোভী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সঙ্গে করিয়াছে প্রতারণা। 

এই সকল প্রতিষ্ঠান অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপন আর লোভনীয় অফারের মাধ্যমে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করিয়া কাড়িয়া লইয়াছে হাজার হাজার কোটি টাকা। প্রতারণার অভিযোগে সম্প্রতি কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের গ্রেফতারও করা হইয়াছে, বন্ধ হইয়া গিয়াছে অনেক ই-কমার্স সাইট, তবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা তাহাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য কিংবা অর্থ ফেরত পাইবেন কি না, তাহা লইয়া ধোঁয়াশা কাটিতেছে না। 

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত ব্যবসায়িক মডেলের কারণে কেবল সাধারণ গ্রাহকই নহে, অনেক ব্যবসায়ীও ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন। ইহার মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নাই কোনো ধরনের অনুমোদন ও লাইসেন্স। এই সকল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান পত্রপত্রিকা ও সোশ্যাল মিডিয়ায় চটকদার বিজ্ঞাপন, আকর্ষণীয় ক্যাম্পেইন, মডেল-সেলিব্রিটি এবং প্রভাববিস্তারকারী ব্যক্তিত্বদের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর বানাইয়া তাহাদের মাধ্যমে ক্রেতাদেরকে পণ্য ক্রয় করিতে উদ্বুদ্ধ করিত। তবে এই ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অসচেতনতাও কম দায়ী নহে। সাধারণ গ্রাহকরা চটকদার বিজ্ঞাপন, মূল্যছাড় ও প্রতিশ্রুতিতে আকৃষ্ট না হইয়া বাস্তবতার নিরিখে বাজারদর বিবেচনা করিলে অনেকাংশেই প্রতারণা কমিয়া আসিত। অথচ সাধারণ গ্রাহকরা অস্বাভাবিক মূল্যছাড় এবং অফারে আকৃষ্ট হইয়া লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছেন। গ্রাহক ভোগান্তির এই বিষয়টিতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডরাও কি সামাজিক দায় এড়াইতে পারেন? দেশের মানুষের প্রতি তো তাহাদের দায়বদ্ধতা আছে, সুতরাং কেবল অর্থের জন্য কোনো অসৎ ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানের সহিত তাহারা নিজেদের বিকাইয়া দিতে পারেন না। 

কারণ, একজন দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব কিংবা সেলিব্রিটি যখন কোনো পণ্যসেবা কিংবা প্রতিষ্ঠানের হইয়া প্রচারণা চালান, তখন সাধারণ ক্রেতারা তাহাদের দেখিয়াও ভরসা পান এবং পণ্য ক্রয়বিক্রয় করেন। পাশাপাশি গ্রাহকদের মনে রাখিতে হইবে, বিজনেস টু কনজিউমার মডেলের ই-কমার্স কোনো বিনিয়োগের জায়গা নহে; ইহা কেবলই অনলাইন প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে ঝামেলাবিহীনভাবে পণ্যক্রয়ের মাধ্যম। ই-কমার্সে বিনিয়োগ করিয়া অল্প সময়ে স্বল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হইবার আশা অলীক কল্পনা বই আর কিছু নহে। ইতিমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডিজিটাল কমার্স পরিচালনার নির্দেশিকা জারি করিয়াছে, যাহাতে পণ্যের অর্ডার দেওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাহা ক্রেতার হাতে পৌঁছাইয়া দেওয়ার বিধান রহিয়াছে এবং তাহাতে ব্যর্থ হইলে অগ্রিম নেওয়া পণ্যমূল্য জরিমানাসহ ফেরত দেওয়া, রিফান্ড সংক্রান্ত এবং অনলাইন গেটওয়েতে গ্রাহকদের অর্থের সুরক্ষার কথাও বলা হইয়াছে। 

ই-কমার্স বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় একটি খাত এবং এই খাতের মূল স্তম্ভ হইল গ্রাহকের আস্থা। গ্রাহকের আস্থা রক্ষা না করা হইলে ই-কমার্স খাত টেকসই খাত হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হইবে না। বিশ্বের জায়ান্ট ই-কমার্স সাইট আমাজন, আলিবাবা, আলিএক্সপ্রেস, ইবে হইতে শুরু করিয়া পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রের ফ্লিপকার্ট, স্ল্যাপডিল, জিওমার্টের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলি দীর্ঘদিন ধরিয়া সততার সহিত ব্যবসা করিয়াই গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করিতে সক্ষম হইয়াছে। 

সুতরাং গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের পাশপাশি ই-কমার্স খাতে কর্মরত সৎ ও প্রতিশ্রুতিশীল উদ্যোক্তাদেরও আগাইয়া আসা জরুরি। সাম্প্রতিক সময়ে ই-কমার্স সেক্টরে যেই অস্থিরতা দেখা দিয়াছে তাহা নিরসনে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলিকে আন্তরিক হইতে হইবে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলিকে যথাযথ আইনি কাঠামোতে লইয়া আসিতে হইবে যাহাতে কেউ প্রতারণার আশ্রয় লইলেও গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা যায়। পাশাপাশি গ্রাহক হয়রানি নিরসনে তাহাদের যে কোনো অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারটিকেও গুরুত্ব দিতে হইবে।

ইত্তেফাক/এএএম