ব্যথানাশক ওষুধ অক্সি-মরফোন ট্যাবলেট জীবন বাঁচানোর হলেও সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়ারা মাদক হিসেবে ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবির) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ‘এই ওষুধ সেবনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণরা অকালে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।’ মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) সকালে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এরআগে, গত গত ১৯ নভেম্বর ডিবির লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম বাবু বাজার এলাকা থেকে অক্সি-মরফোন মাদক হিসেবে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে মো. আলমগীর সরকার (৫৮) ও জাহিদুল ইসলাম (৩৪) নামে দুই জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মিটফোর্ডও ধানমন্ডির সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ১৩ হাজার পিস অক্সি-মরফোন (O- Morphon) ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে ডিবি জানতে পারে, রাজধানীসহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের তরুণরা এই মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘অক্সি-মরফোন একটি ইউফোরিক ড্রাগ। যা মস্তিষ্কে প্রচণ্ড আনন্দ অনুভূতি তৈরি করে। এটি সেবনে শরীরে সাময়িকভাবে দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা ভুলিয়ে দেয়। ব্যথার সিগন্যাল গিয়ে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে না। মস্তিষ্ক বোধহীন, অসার হয়ে যায়। মূলত এই ট্যাবলেট শুধু সেসব রোগীর জন্য ব্যবহার করা হয়, যারা ক্যানসার আক্রান্ত বা বেশিদিন বাঁচবে না। যাদের শরীরে প্রচণ্ড আঘাতের কারণে অসহ্য ব্যথা হচ্ছে এমন ব্যক্তিদের। কিন্তু কেউ যদি টানা সাতদিন এই ট্যাবলেট সেবন করে, তবে তার কিডনি ড্যামেজসহ উচ্চ পর্যায়ের মৃত্যু ঝুঁকি থাকে।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘মূলত মাদকসেবীরা অক্সি-মরফোন গুঁড়ো করে যেকোনো সিরাপ বা পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খায়। যুব সমাজ, বিশেষ করে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এই মাদকের ব্যাপক ব্যবহার গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা বিপুল পরিমাণে ভয়ঙ্কর এই ড্রাগ সংগ্রহ করে মাদকসেবীদের কাছে বিক্রি করে আসছিল।’
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘এই ড্রাগটি মাদক দ্রব্য অধিদফতরের 'ক' শ্রেণীভুক্ত একটি মাদক। এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের অনুমতি থাকতে হয়। কিন্তু আমরা তদন্ত করতে গিয়ে দেখলাম, এসবের কিছুই হচ্ছে না। উল্টো এ ড্রাগ তৈরির জন্য সারাদেশে ১২০টির মতো প্রতিষ্ঠান অনুমতি পেয়েছে। এরমধ্যে বরিশালে ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ঢাকায় মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠান। অথচ ঢাকাতে বেশি প্রয়োজন থাকার কথা। সেখানে বরিশালেই বেশি। কেন বরিশালে বেশি, আমরা তা নিয়ে তদন্ত করবো।’
এমন অনিয়মের দায় কার, এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমরা এখনই কাউকে দায়ী করছি না। তবে তদন্তে নিশ্চয় সবকিছু পরিষ্কার হবে। যদি তরুণ সমাজকে বাঁচাতে হয়, তাহলে যেকোনো মূল্য এই ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’