শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্কুল থেকে শিশুর ঝরে পড়া রোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২১, ০২:০৪

শহরের প্রান্তিক এলাকার শিশুদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া রোধে এবং তাদের  জন্য উন্নতমানের শিক্ষা নিশ্চিতে প্রয়োজন স্কুলে সুশাসন, আর্থিক সহায়তায় স্বচ্ছতা, উন্নয়ন প্রকল্প এবং বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ। সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। 

বুধবার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ‘রিডিউসিং স্কুল ড্রপআউট ইন আরবান স্লামস অব বাংলাদেশ: ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভ (আরডিসি)’ এর সহায়তায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪০টি স্কুলে এবং ৬৭৩টি গৃহস্থালিতে বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিসেম্বর ২০২০ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত জরিপ চালিয়ে এই গবেষণাটি পরিচালনা করে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। 

জরিপে দেখা গেছে যে, গবেষণায় অংশগ্রহণকারী প্রতিটি স্কুলেই স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও অভিভাবক-শিক্ষক সমিতি রয়েছে তাদের ২৭ দশমিক ৫ শতাংশের এবং স্কুল কেবিনেট রয়েছে ৫৭ শতাংশের। 

গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কালেক্টিভের সভাপতি ড. মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, এই জরিপমতে, অংশীদারদের মতে বাসায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা দেখভাল করার দায়িত্ব প্রাথমিকভাবে অভিভাবকদের। এছাড়া স্কুল থেকে শিশুদের ঝরে পড়া প্রতিরোধে শিক্ষক এবং অভিভাবকের নজরদারি প্রয়োজন। 

শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে আলোচনা সভা

এই জরিপের মধ্য দিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে- শিশুর পড়াশোনা নিশ্চিতে স্কুলে অভিভাবক-শিক্ষক সমিতির ভূমিকা আশা করা হলেও বিদ্যমান দায়িত্ব ও ভূমিকা খুবই কম। অংশীদাররা আরও জানান যে, অভিভাবক-শিক্ষক মিটিং এবং স্কুলের বিষয়ে অভিভাবকরা প্রায়ই আগ্রহী থাকেন না। 

জরিপে দেখা গেছে, দীর্ঘকালীন স্কুল বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি তাই স্কুলকে নিজেদেরও শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতিপূরণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রতিকারমূলক শিক্ষা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনায় পুনরায় ফিরে যেতে পারে। 

গবেষণা প্রতিবেদন মতে, স্কুল পুনরায় চালু হওয়ার ফলে, আর্থিক সহায়তা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান জরুরি। সকল শিক্ষার্থী যেন স্কুলে ফিরে আসে তা নিশ্চিতে স্কুলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। স্কুলের বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য ফি-এর বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে মত দেন তারা। 

আয়োজনের প্রধান অতিথি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, করোনা আমাদের সামনে এক নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হয়েছে। এ ধরণের পরিস্থিতির জন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলো না। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেছি যত দ্রুত সম্ভব সাড়াপ্রদানে। স্কুল বন্ধের এক সপ্তাহের মধ্যেই সংসদ টিভি ক্লাসরুম ও অনলাইন ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেছি। 

স্বাগত বক্তব্যে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর সেন্ট্রাল অ্যান্ড নর্দান রিজিওন প্রধান আশিক বিল্লাহ বলেন,মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষকবৃন্দ ও স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির মধ্যে অন্তত প্রতি তিনমাসে বিদ্যালয় পরিচালনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন। 
তিনি আরও বলেন, বস্তিতে বসবাসরত এবং গ্রামীণ জনপদে যেসব শিশু হতদরিদ্র পরিবারে বসবাস করে তাদের স্কুল ফি মওকুফ করা প্রয়োজন, কারণ করোনার ফলে তাদের পরিবারের রোজগার অনেকাংশেই কমেছে। শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতে আমাদের সমন্বিতভাবে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।  

আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন, অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ওয়াহিদা বানু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দা তাহমিনা আক্তার। 

 

ইত্তেফাক/এসআই