তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের রাতেই ভোটকেন্দ্র দখলে রীতিমত মহড়া দিচ্ছে বহিরাগতরা। প্রার্থীদের অভিযোগ, প্রভাব বিস্তার ও জাল ভোটের মাধ্যমে প্রার্থীকে জয়ী করতে মরিয়া এসব বহিরাগতরা।
কেন্দ্র দখলের এই মহড়ায় অসহায় ভোটার-প্রার্থীরা। একদিকে কেন্দ্র দখলের মহড়া অন্যদিকে ভোটার-প্রার্থীদের অসহায়ত্ব। সুষ্ঠু ভোট নয়, যেন কেন্দ্র দখলই মূল লক্ষ্য। ভীতিকর পরিস্থিতি সর্বত্রই। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ রবিবার লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের ১০টি ইউপিতে অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ।
যদিও ভোটের আগেই এই উপজেলার ৩টি ইউপিতে প্রভাব খাটিয়ে তিনজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে গেছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, কেন্দ্রে না আসার জন্য ভোটার ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থিতসহ এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচন অফিস ও রিটার্নিং অফিসারের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ করেছেন উপজেলার চরপাতা ও সোনাপুর ইউনিয়নের ৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। আজ রবিবার অনুষ্ঠিত ভোট সংঘাত ও প্রভাবমুক্ত করতে প্রত্যেক কেন্দ্রে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভার প্রভাবশালীরা ইউপি ভোটে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। তাদের মহড়ায় ভীতসন্ত্রস্ত ভোটাররা। তার মধ্যে অন্যতম উপজেলা চারপাতা ইউনিয়ন।
ভোটার এবং প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমকে মনোনয়ন না দিয়ে সুলতান মামুনুর রশিদের হাতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়া হয়েছে। এই মনোনয়নে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ করেছেন তারা।
বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিদ্রোহী প্রার্থী খোরশেদ আলম লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘নির্বাচনের দুইদিন আগে থেকে ইউনিয়নের হাজার হাজার বহিরাগত প্রবেশ করে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এসব ঘটনা নিয়ে আমি ৯টি অভিযোগ করেছি। কিন্তু প্রশাসনকে অভিযোগ দেওয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, ‘উপজেলার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ভোটের মাঠে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চান সেটা কেউ কল্পনাও করতে পারিনি। তিনি প্রতিদিন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে মহড়া দিচ্ছেন এলাকায়।’
খোরশেদ আলম দাবি করেন, সুষ্ঠু ভোট হলে ৮০ শতাংশ ভোট তিনি পাবেন। তা জেনে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে জাল ভোট দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
সোনাপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (মোটরসাইকেল) প্রতীকের সোগার হোসেন লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘ইউনিয়নের প্রত্যেকটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। কেন্দ্র ভিত্তিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হলে সুষ্ঠু ও সংঘাতমুক্ত নির্বাচন হবে।’ এ পর্যন্ত ৫টি অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি।
লিখিত অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ‘বহিরাগতরা এসে আশ্রয় নিচ্ছে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কিসমত আমাদের ইউপিতে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। তার লোকজন আচরণবিধি মানছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হারুন মোল্লা ইত্তেফাককে বলেন, ‘বহিরাগতদের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। বহিরাগতদের ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
জেলা পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামান বলেন, ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, আবাধ ও সন্ত্রাসমুক্ত নির্বাচন দিতে আমরা শতভাগ প্রস্তুত। আমরা নির্বাচনি আইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। কোনো অন্যায়কারীকে ছাড় দেওয়া হবে না। কেউ কোনো বিশেষ সুবিধা পাবে না।’
জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য থাকবে। আমরা বিন্দুমাত্র নির্বাচনি আচরণবিধির ব্যত্যয় ঘটতে দেব না। বহিরাগত ঠেকাতে মেঘনা নদীতে কোস্টগার্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।