শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কঠোর হইতে হইবে

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২১, ১৫:০০

দেশে এক শ্রেণির রাজনীতি-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অবাঞ্ছিত, অগ্রহণযোগ্য ও দায়িত্বজ্ঞানহীন লাগামছাড়া বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পাইতেছে। সেই বক্তব্য সমাজের সর্বস্তরের মানুষ, প্রশাসন সকলেরই গোচরীভূত হইতেছে। এই সকল বক্তব্য নিঃসন্দেহে সরকারের জন্য বিব্রতকর। 

গ্রামগঞ্জে যে ভাষায় এই সকল ব্যক্তি কথা বলিতেছেন তাহাতে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, নিশ্চিতভাবেই অবস্থা নৈরাজ্যের দিকে হাঁটিতেছে। এইরকম চলিতে থাকিলে কাহারো সাধ্য থাকিবে না নিয়ন্ত্রণ করিবার। টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকা খুলিলে আমরা দেখিতে পাই,  বিশেষ করিয়া নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতা দখল, ক্ষমতা অর্জনের প্রতিযোগিতা চলিতেছে। এই সকল দেশের গণতন্ত্রের রূপ দেখিয়া হতাশ হইতে হয়। 

প্রকৃত অর্থে উন্নয়নশীল এই সকল দেশে গণতন্ত্র হইল কাজীর গরুর মতো, যাহা কিতাবে আছে, গোয়ালে নাই। এই সকল দেশের সরকার গণতন্ত্র বলিতে কেবল ভোট গ্রহণকেই বুঝিয়া থাকে। তাই যে করিয়াই হউক, জয় নিশ্চিত করাই মুখ্য হইয়া দাঁড়ায়। নির্বাচনের বিধিমোতাবেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকিলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাহাদের অগ্রাহ্য করিয়া ভোটে অনিয়মের আশ্রয় লইয়া থাকে। সংখ্যায় কম হইলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং প্রশাসনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের কেহ কেহ এই সকল অনিয়মের সহিত জড়াইয়া পড়েন। এই জোরপূর্বক প্রচেষ্টা যখন ভোটারদের ভোট প্রদান বাধাগ্রস্ত করে, তখন ভোটাররা ভোটের বিষয়ে নিরুত্সাহিত হইয়া পড়ে। 

ইহা অস্বীকার করিবার উপায় নাই, উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলিতে কোথাও শতভাগ সঠিক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। তবে শতভাগ না হইলেও মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নজিরও কম নহে; কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হইল, উন্নয়নশীল বিশ্বে যখন যাহারা ক্ষমতায় আসে তাহারাই ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া যেকোনো নির্বাচনকে নিজেদের বাগে আনিবার অপচেষ্টা চালায়। এই সকল দেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে যেইভাবে অগ্রহণযোগ্য বক্তব্যের ফুলঝুরি, অনিয়ম, দুর্নীতি, হানাহানি, মারামারি, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি বিষয় কালচারে পরিণত হইয়াছে তাহা আমাদের না ভাবাইয়া পারে না। এককালে নির্বাচন করিতে প্রার্থীদের পক্ষে তাহাদের কর্মীরা কাজ করিত, তাহাদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাইত। 

অথচ আজকাল উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলির নির্বাচনে গুন্ডা-পান্ডা, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের দখলে। তাহারা ভয়ভীতি দেখাইয়া ভোটারদের আতঙ্কিত করিয়া তুলে, সহিংসতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করিয়া নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করিতে চায়। এমন পরিস্থিতি চলিতে থাকিলে এক সময় হয়তো দেখা যাইবে, নির্বাচন হইতেছে অথচ ভোটারের কোনো অংশগ্রহণ নাই। ক্ষমতার জোর খাটাইয়া এবং সহিংসতা সৃষ্টি করিয়া নির্বাচনকে বাগে আনিবার এই সংস্কৃতি চলিতে থাকিলে হয়তো দলগুলি নির্বাচন বয়কট করিয়া বসিয়া থাকিবে। নির্বাচন জিনিসটাই তখন বিলুপ্ত হইবার আশঙ্কা দেখা দিবে। ইহা কোনো ভালো ইঙ্গিত নহে।

উন্নয়নশীল দেশগুলির নীতি-নির্ধারকদের মনে রাখিতে হইবে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করিয়া সহিংসতা, মারামারি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, লাগামহীন অগ্রহণযোগ্য বক্তব্য ইত্যাদি চলিতে থাকিলে তাহা দেশকে সংঘাতের দিকে টানিয়া লইয়া যাইবে। এই সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহা হইলে দেশ চরম নৈরাজ্যের দিকে ধাবিত হইবে। দেশ চালাইতে হইলে অপকর্ম এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অ্যাকশন লইবার কোনো বিকল্প নাই। 

যাহারা ক্ষমতার জোর খাটাইয়া, গুন্ডা-সন্ত্রাসী ও সহিংসতার রাজনীতি করিয়া থাকেন তাহাদেরও মনে রাখিতে হইবে, মানুষের পিঠ যখন দেওয়ালে ঠেকিয়া যায় তখন সে প্রতিবাদী না হইয়া পারে না। সাধারণ মানুষও দিনের পর দিন চাহিয়া চাহিয়া এই পরিস্থিতি দেখিবে না। আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতেও জনগণ অন্যায়, অনাচারের বিরুদ্ধে সরব হইয়াছে, প্রতিবাদী হইয়া রাজপথে নামিয়া আসিয়াছে। সুতরাং সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হইতেই হইবে।

ইত্তেফাক/এএএম