বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফরাসি সাংবাদিকের ক্যামেরায় মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ মুহূর্ত

আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:২৮

মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ফরাসি সাংবাদিক অ্যান ডি হেনিং। এ সময় তিনি বিধ্বস্ত দেশ আর বাঙালিদের দৃঢ়তার ছবি তার ক্যামেরায় তুলে আনেন। তার ক্যামেরায় উঠে আসে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, শরণার্থীদের ছবি। তার লক্ষ্য ছিল, বিশ্ববাসীর সামনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরা। মুক্তিযুদ্ধের সেইসব দুর্লভ ছবি প্রথমবারের মতো দেখার সুযোগ পেলো বাংলাদেশের মানুষ। 

আজ শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে ‘উইটনেসিং হিস্ট্রি ইন দ্য মেকিং ফোটোগ্রাফস বাই অ্যান ডি হেনিং’ শীর্ষক প্রদর্শনী।

প্রদর্শনী দেখছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা। ছবি: আব্দুল গনি

প্রদর্শনীতে মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এমন কিছু ছবি স্থান পেয়েছে, যা এর আগে কোথায় প্রদর্শন করা হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আবারও এসেছিলেন অ্যান। স্বাধীন দেশে জাতির নতুন প্রধানমন্ত্রী কেমন বক্তৃতা দেন তা দেখার আগ্রহ থেকে। সে সময় তোলা বঙ্গবন্ধুর রঙিন বেশকিছু ছবি তুলেছেন তিনি। সেসব ছবিও স্থান পেয়েছে এ প্রদর্শনীতে।

প্রদর্শনী দেখছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা। ছবি: আব্দুল গনি

ফটো জার্নালিস্ট অ্যান ডি হেনিং-এর ব্যক্তিগত সংগ্রহশালায় রয়েছে অসংখ্য অনন্য রেকর্ড যা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের রূপান্তরের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। ১৯৭১ সালে ২৬ বছর বয়সে তার প্রথম বাংলাদেশে সফর ছিল। যখন ঢাকায় পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দিচ্ছিল না। তিনি কলকাতা হয়ে কুষ্টিয়া অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এরপর বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ঘুরে ছবি তোলেন। এ সময় তার লেন্সে বাংলাদেশের প্রকৃত যুদ্ধ, বিধ্বস্ত জীবনের চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধকালে নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে শরণার্থীদের ট্রেনে গ্রাম থেকে গ্রামে পালিয়ে যাওয়ার বেশ কিছু ছবি রয়েছে প্রদর্শনীতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এবং সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজন করেছে প্রদর্শনীটি। 

প্রদর্শনী দেখছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা। ছবি: আব্দুল গনি

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সামদানী। সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ট্রাস্টি ও বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

কে এম খালিদ বলেন, এ প্রদর্শনী মুক্তিযুদ্ধের কথা, বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথাও বাংলাদেশের মানুষের ত্যাগের কথা তুলে ধরেছে। নসরুল হামিদ বিপু বলেন, অ্যানা ডি হেনিং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রহের জন্য সে যে সাহসের পরিচয় দিয়েছে তা অতুলনীয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। নাদিয়া সামদানী বলেন, প্রদর্শনীটি মুক্তিযুদ্ধের লড়াই ও মানুষের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা তুলে ধরেছে। যা আমাদের তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস।

প্রদর্শনী দেখছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা। ছবি: আব্দুল গনি

করোনার কারণে এই প্রদর্শনীতে আসতে পারেননি অ্যান ডি হেনিং। তবে, প্রদর্শনীতে ভিডিও বার্তায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে অ্যানির প্রথম সাক্ষাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‌আমি দেখেছি কিছু তরুণ মুক্তিবাহিনী তাদের অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আসছে যেখানে একটি লম্বা বাঁশের খুঁটিতে সবুজ, লাল এবং হলুদ বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে।

১৯৭২ সালে দেশে তার দ্বিতীয় সফরের সময় অ্যানের ছবিতে বঙ্গবন্ধু নানা মাত্রায় উঠে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে একবার দেখার আগ্রহ থেকেই বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার সফর করেছিলাম।

প্রদর্শনী দেখছেন উপস্থিত দর্শনার্থীরা। ছবি: আব্দুল গনি

প্রদর্শনীতে মোট ৩৮টি ছবি স্থান পেয়েছে। এরমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ছবির পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ১১টি ছবি, ভিয়েতনাম যুদ্ধের ৯টি ছবি ও তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বিশেষ মূহূর্তের ছবি স্থান পেয়েছে। রুকমিনী রেকভানা কিউ চৌধুরীর নির্দেশনা ও পরিচালনায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে এই প্রদর্শনী উন্মুক্ত থাকবে সাধারণ দর্শকদের জন্য। প্রদর্শনী চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

ইত্তেফাক/কেকে