মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমি বেদখল হয়ে গেছে। বধ্যভূমির ওপর একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) কার্যালয় ও বসতবাড়ি গড়ে উঠেছে। এতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে যেতে বসেছে। বধ্যভূমিটি সংরক্ষণে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। ৭১ হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিচিহ্ন চিহ্নিতকরণে এখানে শহিদ মিনার সংরক্ষণ না থাকায় এলাকার নতুন প্রজন্ম সঠিক মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস থেকে বঞ্চিত।
সাটুরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের নথিতে কয়েকটি দাগে ৭২ শতাংশ জমির ওপর বধ্যভূমি থাকলেও বর্তমানে তা ব্যক্তিমালিকানায় চলে গেছে। কয়েক জন প্রভাবশালী স্বাধীনতার পর ভুয়া দলিল তৈরি করে বধ্যভূমির জমি দখল করে বিক্রি করে দিয়েছে। বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণ কমিটি জরিপ চালিয়ে সরকারি সাটুরিয়া আদর্শ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পেছনে (উত্তরে) ও উপজেলা ডাকঘরের দক্ষিণে একটি বধ্যভূমি চিহ্নিত করে। জরিপ কমিটির রিপোর্টে বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। তৎকালীন ইউএনও ড. তরুণ কান্তির সময় বধ্যভূমির ওপর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রস্তাব হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরে ইউএনও মিজানুর রহমানের সময় বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার জন্য ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু বধ্যভূমির ওপর বসতবাড়ি নির্মাণ হওয়ায় টাকা ফেরত যায়। ২০১১ সালে ইউএনও মুহাম্মদ আবুল কাশেম ও তৎকালীন ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ ফটো সাটুরিয়ার বধ্যভূমির জায়গা পরিদর্শন করে পুনরায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। তবে নথিপত্রে জমি বর্তমানে ব্যক্তিমালিকানার হওয়ায় উদ্যোগ থেমে যায়। বর্তমানে বধ্যভূমির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বধ্যভূমির ওপর ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করে এনজিও কার্যালয় ও বসতবাড়ির নির্মাণ করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, সরকারি সাটুরিয়া আদর্শ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর আল-বদর-রাজাকাররা মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য নারীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে বধ্যভূমিতে পুঁতে রাখত। স্বাধীনতার পর ক্যাম্পের পেছন থেকে অসংখ্য মানুষের কঙ্কাল ও হাড় উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও বধ্যভূমিতে সুধীর রায়, কালু রায়, বিজয় রায়, মৃগাল রাণী রায়, কালুমিয়া, আভারাণী, ডা. নরেন্দ্র কুমার ঘোষ, হালিম ফকিরসহ প্রায় দুই শতাধিক নারী-পুরুষকে গণকবর দেওয়া হয়। সাটুরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ও উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ খ ম নুরুল হক জানান, বধ্যভূমির জমি এখন ব্যক্তিমালিকানার হওয়ায় কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ না থাকায় বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না।