শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

এখন সময় বৈষম্যহীন দেশ গড়ার 

আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪:৫৪

১৬ই ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও তাত্পর্যবহ তা বাঙালি ছাড়া বিশ্বে অন্য কেউ অনুভব করতে পারবে না। প্রতি বছর দিনটিতে একদিকে বাঙালি জাতি যেমন বিজয়ের আনন্দে মেতে উঠে অন্যদিকে স্বজন হারানোর বেদনায় মলিন হয়। ফলে বিজয় দিবস বাঙালি জাতীয় জীবনে আনন্দ বেদনা মিশ্রিত এক উজ্জ্বলতম দিনে পরিণত হয়। প্রতি বছরের মতো মিশ্র অনুভূতি নিয়ে বিজয় দিবস পালিত হলেও এ বছরের বিজয় দিবস আমাদের জন্য ভিন্নমাত্রা যোগ করছে। কেননা, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর ৯৩ হাজার সৈন্য আত্মসমপর্ণের মাধ্যমে বিজয় লাভ করা জাতিটি আজ পৌঁছে গেছে বিজয়ের ৫০ বছরে। এ বছর বাঙালি জাতি উদ্যাপন করছে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী। যা জাতি হিসেবে বাঙালিদের জন্য অত্যন্ত গৌরব ও আনন্দের।

১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এবং ২০২১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর সুদীর্ঘ এই ৫০ বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে পরিণত হয়েছে মধ্য আয়ের দেশে। এছাড়াও জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রে লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। শিক্ষা, চিকিত্সা, অবকাঠামো, ডিজিটালাইজেশনসহ সব সেক্টরেই ফিরেছে সুদিন। বিজয় অর্জনের তত্কালীন সময়ে এদেশে শিক্ষার হার ছিল যত্সামান্য। পুরুষ শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার সুযোগ পেলেও এদিক থেকে পিছিয়ে ছিল নারী শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আজ আর সেদিন নেই। নারী-পুরুষ সমান তালে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছে। সমাজের সব পর্যায়ে রয়েছে নারীদের অবাধ বিচরণ। যা এদেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে কান্ডারির ভূমিকা রাখছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বছরগুলোতে যুদ্ধবিধ্বস্ত এ দেশের বহু মানুষকে বিনা চিকিত্সায় জীবন দিতে হয়েছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশে আজ স্বল্প খরচে মিলছে যে কোনো রোগের আধুনিক চিকিত্সাসেবা। একই সঙ্গে আমরা পৌঁছে গেছি ডিজিটাল বাংলাদেশের সন্নিকটবর্তী অবস্হানে। আজ দেশের অধিকাংশ কাজ পরিচালিত হয় ডিজিটাল মাধ্যমে। যা দেশকে উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সহায়তা করছে প্রতিনিয়ত। অবকাঠামোগত দিক থেকেও আগের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ। উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মানুষের মাথাপিছু আয়, জিডিপি, জিএনপি, রপ্তানি আয়, রেমিট্যান্সসহ জীবনযাত্রার মান। যা বিজয়ের ৫০ বছরে এদেশের জন্য বিশাল অর্জন।

এত অর্জনের পরও রয়ে গেছে কিছু না পাওয়ার গল্প। আজও দেশের আনাচে-কানাচে জরাজীর্ণ অবস্হায় ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধাদের অসহায় কিছু পরিবার। যা অনেক সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সহায়তায় জনসম্মুখে উঠে আসে। জাতির সাহসী সন্তানদের এসব পরিবারগুলো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সেসব সাহসী বীরদের ভূষিত করতে হবে প্রকৃত মর্যাদায়, পরিবারগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে। অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোর মতো সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করতে হবে তাদের। দেশে মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়লেও বহু মানুষ করোনার এই দুর্যোগকালে নেমে গেছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। ফলে কিছু মানুষ সম্পদের পাহাড় গড়ছে আবার কিছু মানুষ দারিদ্রের দুষ্টু চক্রে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বেকারত্বের মহামারিতে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের বহু মেধাবী তরুণ। ফলে দেশকে সামনে থেকে এগিয়ে নেওয়া তরুণরা ডুবে যাচ্ছে নানা ধরনের হতাশায়। লিপ্ত হচ্ছে বিভিন্ন অপরাধ কর্মে। বাংলাদেশ ডিজিটাল দেশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছালেও ডিজিটাল মাধ্যমের সব সুযোগ-সবিধা এখনো পুরোপুরি পৌঁছেনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে। এমনকি গ্রাম বাংলার অধিকাংশ মানুষ অবগত নয় আধুনিক এই সেবা সম্পর্কে। ফলে সমাজের সব ক্ষেত্রে বিরাজ করছে নানা ধরনের বৈষম্য। মানুষ তার অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এ বৈষম্যগুলোই সমাজকে ধাবিত করছে নানা ধরনের অপরাধপ্রবণতার দিকে। যা দেশের অগ্রযাত্রার পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। এমনকি একই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্রের এবং জাতির পিতার বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই বিজয়ের প্রকৃত অর্থ ধরে রাখতে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজন বৈষম্যহীন একটি দেশ গঠন করা। এর জন্য প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন্ত নিজ নিজ দায়িত্ব কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে এই হোক প্রতিটি মানুষের শপথ। তবেই অর্জিত হবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং গড়ে উঠবে বৈষম্যহীন একটি দেশ।

লেখক: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন