শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মৌসুমি শীতের সবজি 

আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ০২:৪৯

এক এক ঋতুতে এক এক ধরনের ফসল জন্মে। শীতকালে আমাদের দেশে নানা রকম শাকসবজি উত্পন্ন হয়। যেমন ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, আলু, গাজর, বেগুন, মুলা, লাউ, শিম, ধনেশাক, পালংশাক, লালশাক প্রভৃতি। শীতকালীন শাকসবজিতে আছে মানব দেহের জন্য উপকারী ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ, আয়োডিন প্রভৃতি। অতি প্রয়োজনীয় খনিজ লবণ রয়েছে। তাছাড়া কিছু পরিমাণে স্নেহ পদার্থ এবং যথেষ্ট পরিমাণে শর্করা জাতীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। 

শিম জাতীয় বিভিন্ন সবজিতে পর্যাপ্ত প্রোটিন রয়েছে এবং অন্যান্য শাকসবজিতে প্রোটিনের পরিমাণ কম থাকলেও লাইসিন ও ট্রিফটোফেন নামক অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে বেশি। তাছাড়া গাঢ় সবুজ ও হলুদ রঙের শাকসবজি বিশেষ করে গাজর, টমেটো, বাঁধাকপি, মুলাশাক, লালশাক ও পালংশাকে প্রচুর ক্যারোটিন থাকে। এ ক্যারোটিন থেকে আমাদের দেহে ভিটামিন ‘এ’ উত্পন্ন হয়। কাজেই পুষ্টির দিক থেকে শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব শাকসবজি দেহের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই শরীরের চাহিদামতো শীতকালীন শাকসবজি খেলে নানা রকম রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 

গবেষণায় দেখা গেছে, শাকসবজি খাওয়ার ফলে ক্যান্সার, কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র ও হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝঁকি অনেক কম। গবেষকরা জানিয়েছেন, যাঁরা পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি খান, তাঁদের হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যর আশঙ্কাও কমে যায়। শীতকালীন শাকসবজিতে প্রচুর আঁশ থাকে। এই আঁশ খাদ্যদ্রব্য হজম, পরিপাক ও বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। মলাশয়ের ক্যান্সার, বহুমূত্র, স্হূলকায়ত্ব, হূত্পিণ্ড, রক্তচাপ, মূত্রনালীর পাথর ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে সাহাঘ্য করে এবং কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে দেহকে রাখে সুস্হ ও সতেজ। তাছাড়া শিশুদের অপুষ্টিজনিত রাতকানা, অন্ধত্ব, রিকেট, বিভিন্ন রকম চর্মরোগ, স্কার্ভি, মুখ ও ঠোঁটের কোণে ঘা, রক্তশূন্যতা দূর করতে রাখে কার্যকর ভূমিকা। 

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, প্রতিদিন একজন শিশুর কমপক্ষে ১০০ গ্রাম ও পূর্ণবয়স্ক একজন লোকের জন্য ২০০ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে পূর্ণবয়স্ক একজন লোক গড়ে ৩০ গ্রাম সবজি খান। এর সঙ্গে আলু ও মিষ্টি আলু যোগ করলেও প্রতিদিন গড় পরিমাণ ৭০ গ্রামের বেশি হয় না। অর্থাত্ প্রয়োজনের তুলনায় আমরা খুব অল্প শাকসবজি খাই। পৃথিবীর আর কোনো দেশের মানুষ সম্ভবত এত কম পরিমাণ শাকসবজি খায় না। বস্ত্তত আমাদের খাবার তালিকায় ভাত জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সে তুলনায় শাকসবজির কদর একেবারেই কম। 

শীতকালীন অধিকাংশ শাকসবজি বিশেষ করে পাতা জাতীয় সবজি ভিটামিন ‘সি’-তে ভরপুর। ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লালশাক, পালংশাক, মুলাশাক কিংবা দেশীয় যে কোনো শাকের মাত্র ৫০ গ্রাম আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু শাকসবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফসলি মাঠে যেমন, তেমনি জমির আইল বা রাস্তার ধারে, পুকুর পাড়ে এক টুকরো জায়গায়, বসতবাড়ির আঙিনায়, ঘরের চালে, দালানের ছাদে, বারান্দার টবে, টিন বা মাটির পাত্রেও অনেক শাকসবজি আবাদ করা যায়। 

ফসল উত্পাদনের ক্ষেত্রে শীত মৌসুম অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ। এ মৌসুমে উজ্জ্বল সূর্যকিরণ পাওয়া যায় এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে বলে ফসল ফলানোর বিভিন্ন প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে চলে। এতে ফসল ভালো জন্মে এবং আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়। 

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন