শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনার বাধা কাটিয়ে ফেরুয়ারিতেই বইমেলা

আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:১৫

করোনা পরিস্হিতি স্বাভাবিক থাকলে পহেলা ফেব্রুয়ারিতেই শুরু হবে অমর একুশে বইমেলা। বাংলা একাডেমি এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সে লক্ষ্যেই বইমেলার প্রস্ত্ততির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে, প্রকাশকদের অনেক বলার পরেও সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনার কোনো আশা দেওয়া হয়নি। গত বছর করোনার সংক্রমণ বেড়ে গেলে মার্চে শুরু হয় বইমেলা, গড়ায় এপ্রিল পর্যন্ত। নানা রকমের সিদ্ধান্েতর কারণে বইয়ের বিক্রিতে ধস নামে। পরিস্হিতি বিবেচনায় সরকারের পক্ষ স্টল ভাড়ার অর্ধেক মওকুফ করা হয়। তবে, এ বছর সরকারের কোনো প্রণোদনা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। প্রকাশকরা বলছেন, প্রায় দুই বছর বই বিক্রি স্থবির। এ পরিস্হিতিতে সরকারের প্রণোদনা পেলে ছোট প্রকাশকদের খুব উপকৃত হতো। কেননা, বইমেলায় অপেক্ষাকৃত কম পঁুজির ছোট প্রকাশনীর সংখ্যাই বেশি।

এ প্রসঙ্গে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ইত্তেফাককে বলেন, প্রকাশকদের এখনই হতাশ হওয়া ঠিক হবে না। এটা সরকারের ভাবনায় আছে। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, ২০২২ সালের গ্রম্হমেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী।’ পরিস্হিতি স্বাভাবিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্হিত থেকে এবারের অমর একুশে গ্রম্হমেলা উদ্বোধনের কথা রয়েছে। প্রতি বছরের মতো গ্রম্হমেলা উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। কঠোরভাবে স্বাস্হ্যবিধি মেনে যাতে বইমেলায় ক্রেতা ও পাঠকরা আসতে পারেন সেই প্রস্ত্ততি নেওয়া হচ্ছে এবারের মেলায় । 

বইমেলার সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস মহামারির পাশাপাশি ওমিক্রনের আক্রমণের কারণে যাতে বইমেলা বন্ধ ঘোষণা না করতে হয় সেজন্য সবধরনের আগাম প্রস্ত্ততি রেখে প্রস্ত্ততি নেওয়া হচ্ছে। কঠোরভাবে স্বাস্হ্যবিধি মেনে যাতে বইমেলায় ক্রেতা ও পাঠকরা আসতে পারেন সেই প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছর বইমেলায় ৪৬০টি প্রকাশনী সংস্হা অংশগ্রহণ করেছিল, তারা এবারও বইমেলায় অংশ নেবেন বলে জানান তিনি। তিনি জানান, এবার বইমেলায় প্রকাশকরা কিস্তিতে স্টলের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন। এবারই প্রথমবারের মতো তাদের এই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এর আগে, প্রকাশকদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্হা রাখা হলেও এ বছর প্রকাশনী সংস্হার প্রকাশকরা যাতে কিস্তিতে ভাড়া পরিশোধ করতে পারেন সে বিষয়ে প্রথমবারের মতো তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান জালাল আহমেদ। ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্টল ভাড়া পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রকাশকরা দুই কিস্তিতে এ ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন। এর আগে, নভেম্বরের মধ্যে ভাড়া পরিশোধের নিয়ম ছিল। 

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রধান উপদেষ্টা এবং আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ও বাংলা একাডেমির বইমেলা উদ্যাপন কমিটির সদস্য ওসমান গণি বলেন, করোনার কারণে গত বছর বইমেলা সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়নি। আশানুরূপ বই বিক্রি হয়নি। ফলে বিক্রেতাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। এবারে প্রকাশকদের জন্য সরকারিভাবে কোন প্রণোদনার ব্যবস্হা রাখা হয়নি। কয়েক দফা বাংলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকাশকদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত আসেনি। তিনি বলেন, প্রকাশকরা করোনাকালীন কোনো প্রণোদনা পায়নি। সে কারণে বইমেলার স্টল ভাড়া সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হলে অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র প্রকাশকরা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতেন। 

এ প্রসঙ্গে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, প্রণোদনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না পাওয়া গেলেও আমার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, গত বছর যেভাবে বইমেলা করেছি এ বছরও অনন্ত সেভাবে করার প্রচেষ্টা রয়েছে। 

ফরিদ আহমেদ আরো বলেন, গত কয়েক বছরে প্রকাশকদের মধ্যে মেলার কাঠামো বিন্যাস নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। ২০২১ সালে সেটি ছিল সবচেয়ে বেশি। এখানে বড় ধরনের সংস্কার আনতে হবে। গতবার অভিযোগ ছিল, বড় প্রকাশনা ও প্যাভিলিয়নগুলো এক জায়গায় মাঝখানে দেওয়া হয়েছে। আর স্টলগুলোকে একসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ভাবা হয়েছিল, আরেকটি প্রবেশপথ ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের দিকে দেওয়ার ফলে স্টলগুলো পাঠক পাবে। কিন্তু আদতে মানুষের স্রোত ছিল বরাবরের মতো টিএসসির দিক থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখান পর্যন্ত। তিনি বলেন, পাঠকদের সুবিধার জন্য প্রবেশ আরো সহজ করা, পাঠকরা যেন সহজেই বইয়ের প্যাভিলিয়ন ও স্টলগুলো খুঁজে পায় সেজন্য সহজ পদ্ধতি বের করা—এগুলো মেলা শুরু হওয়ার পর পরও করা যায়। কিন্তু কাঠামো বিন্যাসের বিষয়টি আগেই ঠিক করতে হবে। কারণ, সেখানে কাজ একবার হয়ে গেলে পরিবর্তন করা যায় না। 

ইত্তেফাক/কেকে