গত ২১ বছর সংগ্রাম করে স্বাধীনতার ৫০ বছরের বিজয় লগ্নে বিশ্বের ১৫০তম দেশ ‘সাওটোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ ভ্রমণের মাধ্যমে আমি এই মাইলফলক সৃষ্টি করি। আমার সঙ্গী ছিল বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা আর বিশ্ব শান্তির বার্তা। ইতিমধ্যে আমি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে ‘পিস রানার’ সম্মাননা নিয়ে দেশে ফিরেছি।
২০০০ সলে ভারতের ভুপালের পাঁচমারিতে ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার’ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আমার প্রথম বিশ্ব ভ্রমণের সূচনা হয়। ১ জুন ২০১৮ সালে নাজমুন ১০০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক হয়েছিলো জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের সীমান্তের ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ওপর।
আমি বেশির ভাগ দেশ ভ্রমণ করি সড়কপথে, কঠিন দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছি, বহুবার মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছি। সংগ্রামে ভরা ছিল আমার এই বিশ্বভ্রমণের অভিযাত্রা। তবুও লাল সবুজের পতাকা হাতে স্বাধীনতার ৫০ বছরে আমার ১৫০ দেশ ভ্রমণের আমার এই অর্জনটুকু আগামী প্রজন্মের জন্য উৎসাহের বার্তা হয়ে থাকুক।
এ পৃথিবীকে দেখার জন্য আমার স্বপ্নই ছিল একমাত্র সম্বল। তারপর ধীরে ধীরে আমি স্বপ্ন আর ভাবনার শক্তিকে নিয়ে বাঁধার দেওয়ালগুলোকে ভেঙেছি এক এক করে। বড় করে ভাবতে শিখিয়েছি নিজের স্বপ্নকে। আমি নিজেকে এখন পৃথিবীর মতো করে ভাবতে পারি। এই ভাবনাগুলো আমাকে শ্রেষ্ঠ সুখ দেয়।
‘পারব না’ এই শব্দটিকে আমি কবর দিয়েছি। সব হবে, সব পারব এমন পজেটিভ চিন্তা আমাকে ধাবিত করেছে প্রতিনিয়ত পৃথিবীর পথে পথে। কিছুটা পথ পার হওয়ার পর আমি দেখলাম— ‘কোনো ভাবনাকে গভীরভাবে ভালোবাসালে সে ভাবনা ফুল হয়ে ফুটে।’
পথে পথে আমি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে বিশ্ব শান্িতর বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। এটা ছিল আমার বিশ্বভ্রমণের আরেকটি অংশ! সেভ দ্য প্ল্যানেট, নো ওয়ার অনলি পিস, পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছি বিশ্ব ভ্রমণের মাধ্যেম, এছাড়া বাল্যবিবাহ বন্ধের লক্ষ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করেছি। শিশু ও তরুণদেরকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করেছি বিশ্বভ্রমণ অভিযাত্রার মাধ্যেম।
সুন্দর সুন্দর ভাবনাগুলো আমাকে অনেক সুন্দর সুন্দর পথে নিয়ে গেছে। যখনই হেরেছি আবার তখনই উঠে দাঁড়িয়েছি। পৃথিবীর বুকে হাঁটতে হাঁটতে আমি শিখলাম—‘বাহুবলের চেয়ে হূদয়ের বল অনেক শক্তিশালী’। আমি বুঝতে পারলাম টাকাপয়সা দিয়ে ইমারত করা যায় কিন্তু পৃথিবীর এই বিস্তর পথে হাঁটা যায় না। তার জন্য প্রয়োজন ইচ্ছে শক্তি, মনের সাহস। তাই আমি সেই সাহসকে ধারণ করে সকল কষ্টকে হাতের মুঠোয় নিয়েছি পুরো পৃথিবীকে দেখার জন্য।
পাথর বাঁধ ভেঙে ভেঙে আমি হেঁটেছি, কখনো কোনো পর্বত ভ্যালিতে সূর্যোদয় উঠলে কেমন লাগে দেখতে তা দেখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটেছি দুর্গম পথে। কত না সুন্দর সেই সূর্যোদয়ের আলোর বিচ্ছুরণ! আমার আরো ভালো লাগতো যখন আমি পৃথিবীর হাজার বর্ণ আর রঙের মানুষের মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতাম একই মানুষ হিসেবে। আমার ভেতরটা ধীরে ধীরে প্রসারিত হতে থাকল। আমি জীবনের কুক্ষিগত চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে থাকলাম ধীরে ধীরে। পৃথিবীর পথের মাঝে নানা রঙের ধুলোবালির সাথি আমি নিজেকে রাঙাতে থাকলাম। সেই ধুলোবালি মেখে আমি আমার স্বপ্নগুলোকে আরো পোক্ত করতে থাকলাম। আমি নিজেকে ভাসাতে থাকলাম ভারতের পাঁচমারির পর্বত ভ্যালি থেকে থেকে আইসল্যান্ডের ল্যান্ডমান্না লুগাড় ভ্যালিতে। তারপর আমি আটলান্টিক থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ক্যারাবিয়ান সাগরের নিজেকে ভাসাতে থাকলাম।
আমি মহাসমুদ্র পার হয়ে বুলগেরিয়ার কৃষ্ণসাগর থেকে ভাসতে থাকলাম জর্ডানের মৃত সাগর পর্যন্ত। আবার আমি ভাসতে থাকলাম গ্রীসের আজিয়ানা সমুদ্র থেকে কোস্টারিকার প্যাসিফিক সমুদ্রের কনসাল সৈকত পর্যন্ত। আমি সেনেগালের গোলাপি রংয়ের রোসো নদী পার হতে হতে গাম্বিয়ার বাঞ্জুল নদীতে লাল সবুজের পতাকা উড়াতে থাকলাম। আমি সুমেরীয় সভ্যতা থেকে পেরুর আদিম সভ্যতার চিহ্ন মাচুপিচুর আগুস কালিয়ানতেস টাউনের জলপ্রপাতের শব্দ শুনতে শুনতে কয়েক হাজার সিঁড়ি পার হয়ে উঠেছিলাম উরুবামবা পর্বতের চূড়ায়।
তারপর আমি ১৪২০০ ফুট উঁচু রেইনবো পর্বত সামিটে যাওয়ার পথে শ্বাসরুদ্ধ আল্টিচুডের মাঝে মৃত্যর সাথে পাঞ্জা লড়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছি লাল-সবুজ পতাকাকে সেই পর্বত সামিটে উড়িয়ে উড়িয়ে। আমি আমার ২৩ ঘণ্টার পর্বত ভ্যালিতে পায়ে হাঁটার অভিযাত্রাকে সম্ভব আমার মনের শক্তি দিয়ে। আমি পোর্তো রিকোর রেইনফরেস্ট থেকে ব্রাজিলের অ্যামাজন পর্যন্ত যাওয়ার স্বপ্নকে সত্যি করেছি। আমি কলম্বিয়ার মেডিজিন শহর থেকে যেতে যেতে ইকুয়েডরের কিতো শহরের বিষুবরেখার ওপরে নিজেকে আবিষ্কার করেছি।
আমি গিনি কোনাক্রির মধ্যরাতে জঙ্গলে আটকা পড়ে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ভয়াবহ পথ পাড়ি দিয়েছি লাল-সবুজের পতাকা মাথায় বেঁধে। ২৬ ঘণ্টা আটকে থাকার সেই ভয়াবহ রুদ্ধশ্বাস যাত্রাপথে আমি নিজেকে শক্ত রেখেছি। আমি পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউ থেকে গিনি কোনাক্রি যাত্রাপথে আড়াই দিন না খেয়ে থাকার সময় ভয়াবহ সময় পার করেছি।
আমি কেনিয়ার নাকুরু শহরের সাদা আর গোলাপী রঙের ফ্লামিংগো বক পাখির নৃত্য দেখতে দেখতে সোয়াজিল্যান্ড দেশের মানজিনি আদিবাসীদের নৃত্যের তালে তালে ঘুমিয়েছি পর্বত ভ্যালির কুঁড়েঘরে। আমি নীল নদের উৎস উগান্ডার জিনজা শহর থেকে মিশরের নীল নদের অন্ত পর্যন্ত গিয়েছি। আমি আর্জেন্টিনার মেন্দোজা শহরের উকো ভ্যালি থেকে উরুগুয়ের পূনতা ডেল এসতা পর্যন্ত বৃষ্টিঝরা পথের গভীর মমতা দেখতে দেখতে পার হয়েছি শত শত কিলোমিটার পথ। কম্বোডিয়ার সিয়াম রিপ থেকে লাওসের ফোর থাউজেন্ড আইল্যান্ডে যাওয়ার পথে প্রচন্ড ঝড়ের মুখে পড়ে অভিযাত্রী কাফেলাদের সাথে সীমান্ত শহরে ভিড়েছি ভয়ানক বিজলী চমকানো মধ্যরাতে। সে ভয়ানক ঝড়ের রাতে মরক্কোর দুনিয়া নামের অভিযাত্রী মেয়েটি আমাকে আঁকড়ে বেঁচে ছিল ঝড়ের মাঝে সেই ভয়ানক ডালপালা ভেঙে পড়া পথের মাঝে।
আমি জর্জিয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হতে হতে বেঁচেছি পাহাড়ের বুকে বুক বিছিয়ে। আমি গুয়াতেমালা থেকে রক্তঝরা পায়ে এল সালভাদর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া হয়ে কোস্টারিকা পর্যন্ত গিয়েছি লাল সবুজের পতাকা হাতে। আমি সুয়েজ খাল থেকে অভিযাত্রা করতে করতে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের সংযুক্তিতে পানামা খাল পর্যন্ত গিয়েছি। আমি তুরস্ক আর আর্মেনিয়ার আরারাত পর্বত ভাগাভাগি নিয়ে আরিয়ানার মুখে ইয়ারবান শহরের ডাউনটাউনে বসে যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের হাহাকারের গল্প শুনেছি।
আমি মৌরিতানিয়ায়র মালি দূতাবাসে প্যারিসের ছেলে ক্লারিয়ো'র চোখে বন্দি করে রাখা মাকে মালির ডেজার্টে উগ্রপম্হীর হাত থেকে ফিরিয়ে আনার আকুতি দেখেছি। আবার আমি পশ্চিম সাহারা মরুভূমির বুকে চন্দ্র সুখ আবিষ্কার করতে করতে লিবিয়ার সাহারায ২০০ বছর বেঁচে থাকা কচ্ছপকে আবিষ্কার করেছি। আমি মরুভূমিতে বোরকা পরিহিত বেদুইন নারীর জীবনকে দেখতে দেখতে ইথিওপিয়ার হামার আদিবাসীর একখণ্ড কাপড় জড়িয়ে থাকা তরুণীর মাঝে জীবনের বৈচিত্র খুঁজে পেয়েছি।
আমি আলবানিয়ার দেতি মাউন্টেন থেকে ছোট্ট একটি পর্বতকন্যার ঘাড়ে বিশাল কাঠের বোঝা নিয়ে নামতে দেখে কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে আবিষ্কার করেছি। আবার আমি একই কষ্টকে দেখেছি ইথিওপিয়ার কনসো ভ্যালির আদিবাসী সেই ছোট্ট মেয়েটির ১০ কেজি ওজনের গ্যালন পানি নিয়ে ১২ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে। এভাবে পৃথিবীর মাঝে অচেনা মানুষের কষ্ট দেখে নিজেকে শুদ্ধ করেছি আমি বারবার। আমি শক্তি পেয়েছি বুর্কিনা ফাসোর ওয়াগাদু শহরের বুকে প্রচন্ড রোদের মাঝে তরুণীরা বোরকা পরে মাথার ওপর তরকারির জুড়ি বেঁধে পেছনে ছোট বাচ্চাকে বেঁধে বাইক চালিয়ে যখন বাজারে যাচ্ছিল। প্রচণ্ড তাপমাত্রায় তরকারি বিক্রি করতে করতে সেই ঘাম ঝরা পরিশ্রমী তরুণীদের চোখে মুখে আমি দেখেছি অপার শক্তির বিস্ময়! আমি নিজেকে আবিষ্কার করেছি ছেলে-মেয়ের ভেদাভেদ বিহীন প্রত্যন্ত আফ্রিকার আদিবাসীদের ছোট ছোট গ্রামে। আবার আমি সিয়েরা লিয়নের বন্ধু ডোরাকে বিদায় বলতে বলতে চেক রিপাবলিকের ব্রওনিয়োর সাথে গুয়াতেমালার ফিউগো ভলকানিক এন্টিগুয়া টাউনের বুকে হারিয়েছি। আমি রুয়ান্ডার আটকে পড়া সীমান্েতর মাঝে সানতানিয়া মেয়েটির ভালোবাসা মেখে মেখে বুরুন্ডির এস্তাসকে খুঁজে পেয়েছি কিগালি শহরের রেস্তোরাঁর টেবিলে। আমি বতসোয়ানা থেকে সাউথ আফ্রিকার পথে যেতে যেতে ফ্রান্সিস টাউনের মেয়ে ইতুমেলেঙ্গের সাথে কাফেলা বেঁধেছি। সেই মেয়েটি জোহান্সবার্গ শহরে আমাকে কালো চাদরে জড়িয়ে কৌশলে রক্ষা করেছে ওই শহরের শটগান হাতে ঘোরা বেপরোয়া যুবকদের বুলেট থেকে। আমি জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের বুকে প্রবাহিত হওয়া ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের মাঝে ব্রিজে দাঁড়িয়ে ১০০তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলক ছুঁয়ে লাল সবুজের পতাকা উড়িয়ে ১৭ কোটি মানুষের একটি বাংলাদেশকে বাকি পৃথিবীর প্রতিটি দেশে বয়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখেছি।
আমি আইভরিকোস্টের আসিনি দ্বীপের বাচ্চাদের মিষ্টি হাসি দেখতে দেখতে পৌঁছেছি ঘানা মিশনারীর বাচ্চাদের হাসিমাখা চাহনিতে। আমি আইরিশ এক যুবকের চাহনিতে কলম্বিয়ার পাস্তো সীমান্ত শহরের ভালোবাসা মেখে পাড়ি দিয়েছি চিলির আতাকামা চন্দ্র ভ্যালির ১০০ বছরেও বৃষ্টি না হওয়া নগরীতে।
আমি কায়রো শহরের জাদুঘরে নিপাত হওয়া শক্তিশালী ফেরাউনের পড়ে থাকা দীর্ঘকায় দেহ দেখতে দেখতে আবার খুঁজে পেয়েছি ইথিওপিয়ার জাদুঘরে পৃথিবীর সবচেয়ে আদি দীর্ঘকায় নারী লুসির দেহের কঙ্কালসার। আমি প্যারিসের ল্যুভর মিউজিয়ামের মোনালিসাকে দেখেছি পশ্চিম আফ্রিকার বেনিনের পোর্তো নভোর আদিবাসী নারীর প্রতিবিম্বে আঁকা দেওয়াল চিত্রে। আমি তাইওয়ান থেকে ফিলিপাইনের পথে চীন সাগরের আকাশে পেন ক্রাশ হওয়া মুহূর্ত থেকে বাঁচতে বাঁচতে নিজেকে আবিষ্কার করেছি ম্যানিলা শহরের জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির ইরাপশনের মাঝে।
আমি ক্লান্ত হতাহত হয়ে হয়ে ম্যানিলায় মধ্যরাতের ঘুমের ভেতর বাবাকে স্বপ্ন দেখতে দেখতে কেঁদে উঠেছি। বাবা আমাকে স্বপ্নের ভেতরে বলেছে—ভয় নেই! ভয় নেই! এই দেখো আমি আছি। ঘুম ভেঙে দেখি বাবা নেই, কিন্তু আমার শক্তি আমি পেয়েছি বাবার দেখানো সেই স্বপ্ন থেকে। তারপর আমি এক সময় পৃথিবীর এই দুর্দান্ত দুর্ভোগে করোনার মাঝে পড়তে পড়তে স্মৃতির মাঝে তুরস্কের ব‚ মস্ক' থেকে ভেসে আসা আজানের ডাক শুনতে শুনতে বোর্নিও ব্র‚নাইয়ের এক সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠি ওমর আলী মসজিদের মিনার থেকে ভেসে আসা আজানের ডাকে। আমার শেষ হয় আপাতত ১৫০ দেশ সফরের অভিযাত্রা আগামীর স্বপ্ন নিয়ে। তারপর আমি ফিরে আসি এক পৃথিবীর স্মৃতি নিয়ে নিজের আবাসস্হলে। পৃথিবী নামক এক শক্তিশালী ভালোবাসা আমার দরজায় কড়া নাড়ে। আমি পৃথিবীর মাঝে সেই শক্তিশালী ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পাই। আমি যেন তাকে ফেলে আসা পৃথিবীর পথে পথে দেখি বারবার। সে আমার আজন্মের ভালোবাসা হয়ে উঠতে থাকে। আমি তাকে ভাসাতে পারি পুরো পৃথিবীর মাঝে। সে আমার পায়ে পায়ে জড়িয়ে যায়। সে আমায় পথ দেখায়। সে আমাকে বারবার বলতে থাকে বাকী পথতো আর বেশি দূর নয়, তোমাকে যে যেতেই হবে শেষ পর্যন্ত। সে আমার উৎসাহ, সে আমার স্বপ্নের মাঝে বসবাস করতে শুরু করে। সে আমার শক্তির কেন্দ্র হয়ে আমাকে তাড়িত করে বারবার। সে আমাকে ছায়া মায়া দিয়ে রাখে। সে আমাকে দূর থেকে ডাকে গভীর ভালোবাসা দিয়ে। সে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়। সে আমাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। সে আমার স্বপ্নের মাঝে বিভোর হয়ে আসে। সে আমাকে হারানোর অজানা ভয়ে অজানা কষ্টে কেঁদে ওঠে। সে আমার বিগত বিজয়ের অধ্যায়গুলো পড়ে পড়ে সুখ পেতে থাকে। সে আমার কষ্টগুলো পড়ে পড়ে আমাকে সাবধানী হতে বলে। আমি তাকে বিশ্বাস দিয়ে আঁকতে থাকি আগামী অভিযাত্রার মানচিত্রের মাঝে। আমি হাসিমুখে বলি পৃথিবীর আর কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে আমি ফিরে আসব তার কাছে। সে আমার বাংলাদেশ।