বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

আমার পথচলা এবং ইত্তেফাক একই সুতোয় গাঁথা 

আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫৭

আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যর সঙ্গে সম্পৃক্ত দৈনিক ইত্তেফাক। জন্মলগ্ন থেকেই পাঠকের প্রিয় পত্রিকাতে রূপান্তরিত এই জাতীয় দৈনিকটি দীর্ঘ এত বছর ধরে এখনো পাঠকের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছে, এটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। 

এখনো যখন কোনো কাজের জন্য বা সাক্ষাতকারের জন্য ইত্তেফাক থেকে ফোন আসে, তখন সত্যিই ভীষণ ভালোলাগা কাজ করে। কারণ, আমার কাছে মনে হয়, আমার পথচলা এবং ইত্তেফাক একই সুতোয় গাঁথা। 

তাই এই জাতীয় দৈনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা। তার পথচলা আরো অনেক বেশি পাঠকপ্রিয় হোক—এটাই আমার কামনা।

করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর আমি এখন অভিনয়ে নিয়মিত। অভিনয়ও করছি, নাটক নির্মাণও করছি। এরই মধ্যে গেল বিজয় দিবসে এটিএন বাংলায় প্রচারিত হলো ‘সালাম কমান্ডার’ নামের একটি নাটক। এছাড়াও চ্যানেল আইয়ের জন্য নির্মাণ করেছি ‘আমি কান পেতে রই’ নাটকটি।

দৈনিক ইত্তেফাক। ছবি: আর্কাইভ

সম্প্রতি আমার অভিনীত মো. জসীম উদ্দিন প্রযোজিত সরকারি অনুদানের সিনেমা ‘দায়মুক্তি’ সেন্সর ছাড়পত্র পেল। এটি নির্মাণ করেছেন বদিউল আলম খোকন। সিনেমাটির গল্প বৃদ্ধাশ্রমকে ঘিরে। বলা যায় আমাকে ঘিরেই সিনেমাটির গল্প। অভিনয় করে ভীষণ ভালো লেগেছে আমার। এতে আমার সহশিল্পী হিসেবে আছেন দিলারা ভাবি (দিলারা জামান)। 

আমরা দুজন এবারই প্রথম একসঙ্গে সিনেমাতে অভিনয় করেছি। সর্বশেষ নাটকে আমরা ‘আমি কান পেতে রই’তে অভিনয় করেছি। গেল ৭ সেপ্টেম্বর আমি ৭৮-এ পা দিয়েছি। এবারের জন্মদিনে বিশেষ কিছু করা হয়ে ওঠেনি। কারণ বিপাশা ও তৌকীর দেশের বাইরে ছিল। তৌকীর কিছুদিন আগে দেশে এসেছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বায়োপিকের কাজ শেষ করার জন্য। সত্যি বলতে কি, করোনার কারণে তো আমাদের জীবন একেবারেই বিপর্যস্ত। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই পরিস্থিতি সারা বিশ্বেই বিরাজমান। 

দৈনিক ইত্তেফাক। ছবি: আর্কাইভ

এখন অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, করোনার মধ্যে থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানুষকে কাজ করতে হচ্ছে। আমিও যেমন এখন নাটকের শুটিং করেছি। কিছু করার নেই, এর মধ্যে থেকেই যতটা সচেতন থেকে শুটিং করা যায়। ঘরে আর কতদিন বসে থাকা যায়। সব সময় সবার কাছে দোয়া চাই আল্লাহ যেন ভালো রাখেন, সুস্থ রাখেন।

আরেকটি কথা না বললেই নয়, আমার আজকের অবস্থানের নেপথ্যে আমার মা-বাবা এবং আমার স্ত্রীর ভূমিকা এক কথায় অনন্য। তৌকীরের নির্দেশনায় সর্বশেষ ‘রূপালী জ্যোত্স্নায়’ ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেছিলাম, চ্যানেল আইতে এটি প্রচারিত হয়েছিল। 

আগামী ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পাচ্ছে আমার অভিনীত মীর সাব্বির পরিচালিত ‘রাত জাগা ফুল’ নাটকটি। সিনেমাটি নিয়ে আমি আমরা সবাই খুব আশাবাদী। কারণ এর গল্পটা চমত্কার। লকডাউনের দিনগুলোতে আমি দুটি মঞ্চনাটকও রচনা করেছি। নাটক দুটো হচ্ছে ‘মধ্যাহ্ন ভোজ হবে কী’ এবং ‘শোধ’। এছাড়াও ‘স্বপ্নের বৃষ্টি’, ‘দ্বিতীয় বাসর’সহ আরো একটি ছোট উপন্যাস রচনা করেছি।

দৈনিক ইত্তেফাক। ছবি: আর্কাইভ

আমার ৭৫তম জন্মদিনে প্রকাশিত হয়েছিল দেশের নানান অঙ্গনের ১০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির লেখা নিয়ে ‘সার্থক জনম হে তোমার শিল্পী সুনিপুণ’। আমার প্রবল ইচ্ছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিনয়ের ওপর ক্লাস নেওয়া। কোনো প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হলে আমি তা ভেবে দেখতে পারি। আমি বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে আমার অভিনয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চাই। 

পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমি মঞ্চে প্রথম ‘টিপু সুলতান’ নাটকে অভিনয় করি। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে মঞ্চে আমার প্রথম নাটক শ্রদ্ধেয় আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’। টিভিতে আমার প্রথম নাটক ছিল জিয়া হায়দারের প্রযোজনায় ‘ইডিপাস’। মঞ্চে আমার নির্দেশিত প্রথম নাটক ‘আগন্তুক’ এবং টিভিতে ‘হারজিৎ’। প্রথম অভিনীত সিনেমা ঋত্ত্বিক কুমার ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। 

১৯৭৪ সালে আলী যাকেরের নির্দেশনায় মঞ্চে ‘বাকী ইতিহাস’ নাটকে অভিনয় করে আমি ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ফর ইনট্রিডিউসিং ন্যাচারালিস্টিক অ্যাকটিং অন বাংলাদেশ স্টেজ’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হই। এটি একটি ইতিহাসও বটে। কারণ এটি বাংলাদেশে দর্শনীর বিনিময়ে প্রথম মঞ্চনাটক। 

লেখক: নন্দিত অভিনয়শিল্পী 

ইত্তেফাক/এএএম