ড্রেন বা পানিতে বর্জ্য ফেললে বা খোলা জায়গায় বর্জ্য পোড়ালে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রেখে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১’ করেছে সরকার। এতে বর্জ্য সৃজনকারী এবং ব্যবহারকারীর দায়িত্ব, প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব, পণ্য প্রস্তুতকারক বা আমদানিকারকের দায়িত্ব, স্থানীয় সরকার কতৃর্পক্ষের দায়িত্ব ও অন্যান্য কতৃর্পক্ষের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
দেশে কঠিন বর্জ্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্য এবং শাকসবজি, কাগজ দ্রব্যাদি, প্লাস্টিক, লেদার, রাবার, মেটাল, গ্লাস এবং সিরামিক, কাঠ/খড়/পাতা, মেডিসিন/কেমিক্যাল, পাথর, ধূলি বিবিধ। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই বিধিমালার বিধি ৭, বিধি ৮ এর উপবিধি (১), (২) ও (৪) এবং বিধি ৯ এর উপবিধি (১), (৪) ও (৮) এর বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। বিধিমালার ৭ বিধিতে বর্জ্য সৃজনকারী এবং ব্যবহারকারীর দায়িত্বে বলা হয়েছে—সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাসরত বর্জ্য সৃজনকারী এবং ব্যবহারকারীকে নিজ কর্মস্হল বা আবাসস্হলে সৃষ্ট সব বর্জ্য স্থানীয় সরকার কতৃর্পক্ষ ও অন্যান্য কতৃর্পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত পদ্ধতিতে ফেলতে হবে। জৈবিকভাবে পচনশীল, অপচনশীল এবং গার্হস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ কঠিন বর্জ্য আলাদা করে আঙিনা বা স্থাপনায় ভিন্ন ভিন্ন ঢাকনাযুক্ত তিনটি পাত্রে সংরক্ষণ করে স্থানীয় সরকার কতৃর্পক্ষের নির্ধারিত শ্রেণির বর্জ্যের জন্য নির্দিষ্ট করা ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। বর্জ্যের কোনো অংশ খোলা রাখা যাবে না। অবকাঠামো নির্মাণ ও ভাঙন থেকে সৃষ্ট বর্জ্য স্থানীয় সরকার কতৃর্পক্ষের কাছে হস্তান্তর করার আগে পর্যন্ত আলাদা রাখতে হবে যাতে ধুলাবালি বাতাসে ছড়াতে বা বৃষ্টির পানির মাধ্যমে ড্রেনে পড়তে না পারে। একক বা সম্মিলিতভাবে সৃষ্ট বর্জ্য আঙিনার বাইরে রাস্তা, খোলা জায়গা, ড্রেন বা পানিতে নিক্ষেপ না করা এবং খোলা স্থানে না পোড়ানো এবং পার্ক, স্টেশন, টার্মিনাল বা জনসমাগমস্হলে নির্দিষ্ট ডাস্টবিন ছাড়া যত্রতত্র কঠিন বর্জ্য নিক্ষেপ করা যাবে না বলে বিধি-৭ এ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে বিধি-৮ এর (১)-এ বলা হয়েছে—দোকান, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার ও অন্যান্য আবাসিক, বাণিজ্যিক বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনের ময়লা-আবর্জনা জমা করে নির্ধারিত জায়গায় ফেলা নিশ্চিত করতে হবে। বিধি-৮ এর (৪)-এ রয়েছে— স্থানীয় সরকার কতৃর্পক্ষের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে উৎস থেকে বর্জ্য আলাদা করা, আলাদা করা বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহের সুবিধা দেওয়া, পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য অনুমোদিত বর্জ্য সংগ্রহকারী বা অনুমোদিত পুনর্ব্যবহার উপযোগীকরণকারীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। পণ্য প্রস্তুতকারকের দায়িত্ব বিধি-৯ এর (১)-এ বলা হয়েছে, উৎপাদনকারীর সম্প্রসারিত দায়িত্বের (ইপিআর) আওতায় জৈবিকভাবে অপচনশীল ডিসপোজেবল পণ্যের প্রস্তুতকারী বা আমদানিকারকদের টিন, গ্লাস, প্লাস্টিক, সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক, পলিথিন, মাল্টিলেয়ার প্যাকেজিং বা মোড়ক, বোতল, ক্যান বা সমজাতীয় পণ্যের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য গ্রাহক পর্যায় থেকে সংগ্রহ করে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, পুনঃচক্রায়নসহ নিঃশেষের ব্যবস্থা করতে হবে। বিধি-৯ এর (৪)-এ রয়েছে নিজস্ব উদ্যোগে বা স্থানীয় সরকার কতৃর্পক্ষের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অর্থায়নসহ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। বিধি-৯ এর (৮)-এ বলা হয়েছে, পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারের সময় নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পণ্যের সৃষ্ট বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ক্রেতা বা ভোক্তার করণীয় সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। স্থানীয় সরকার কতৃর্পক্ষের দায়িত্ব বিধিমালায় বলা হয়েছে, পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্হ্যসম্মত উপায়ে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সম্পাদন এবং তপশিলের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে স্থানীয় সরকার কতৃর্পক্ষকে।
বর্জ্য হ্রাস, পুনর্ব্যবহার ও পুনঃচক্রায়নসহ কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে জাতীয় কৌশল এবং নির্দেশনা অনুসরণে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় বা নিয়োজিত ব্যক্তি, ঠিকাদার সমিতি বা প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রতিটি বাড়ি অথবা অন্য কোনো উৎস থেকে জৈবিকভাবে পচনশীল এবং অপচনশীল কঠিন বর্জ্য, গার্হস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ কঠিন বর্জ্য তিন শ্রেণিতে আলাদাভাবে সংগ্রহ, পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে। নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য ফেলা, স্তূপীকরণ এবং পোড়ানোর ব্যাপারে নির্দেশনা জারি করতে হবে। ড্রেন ও রাস্তায় বর্জ্য ফেললে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ) কেয়া খান বলেন, এসব বিষয় আরোপ করে মানুষকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনার, সচেতন করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। আমরা অনেক কিছুই এই বিধিমালার মধ্যে এনেছি। বিধিমালাটি বাস্তবায়ন করা গেলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরও উন্নতি আসবে বলে মনে করি।
তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি মূলত স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন সিটি করপোরেশন করে থাকে। এই দায়-দায়িত্ব তাদেরই। পৃথিবীর সব দেশেই প্লাস্টিকসহ অপচনশীল বর্জ্য রয়েছে। আমাদের সমস্যা হলো আমরা সেটা ম্যানেজ করতে পারি না। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা বিধিমালাটি করেছি। ‘বিধিমালার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে—এক্সটেন্ডেড প্রডিউসার রেসপন্সিবিলিটি (ইআরপি)। যাদের পণ্য থেকে বর্জ্যের সৃষ্টি হচ্ছে তাদের দায়-দায়িত্বের মধ্যে আনা হয়েছে। বর্জ্য রিসাইক্লিং ও ডিসপোজালের ক্ষেত্রে তাদের দায়-দায়িত্ব ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। ইপিআরের মাধ্যমে এটা করা হবে। বিধিমালায় বিষয়টি অন্তভুর্ক্ত করা হয়েছে।’