শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভবিষ্যৎ কি টিকিয়া থাকিবার লড়াই?

আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ০৭:১৫

এক নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে পড়িয়াছি আমরা। শুধু আমরা নহি, গোটা বিশ্বই। দুই বত্সর হইয়া গেল কোভিড-১৯, তথা করোনা নামক ভাইরাস সংক্রমিত করিয়া চলিয়াছে দেশে দেশে। 

শুধু জীবনের ঝুঁকি নহে, অর্থনীতিকে, এমনকি দেশের শক্তিশালী ব্যবসায়-বাণিজ্য, কলকারখানা, উত্পাদন ও বাজারব্যবস্থাকে ভঙ্গুর করিয়া ফেলিয়াছে। এই ভাইরাসের সহিত যুদ্ধে নামিয়া যখন উত্তরণ ঘটাইবার চেষ্টা চলিতেছিল এবং খানিকটা ঘুরিয়াও দাঁড়ানো গিয়াছিল, ঠিক তখনই ভাইরাসের নূতন আরেক ভ্যারিয়েন্ট আসিয়া আবার সবকিছু স্থবির করিয়া ফেলিতেছে; আবার পিছনে ঠেলিয়া দিতেছে। 

দেশে দেশে আবার লকডাউন দেওয়া শুরু হইয়াছে। কোনো কোনো দেশে লক্ষাধিক মানুষ করোনার নূতন ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হইতেছে। সুতরাং এই রকম এক পরিস্থিতি এখন সৃষ্টি হইয়াছে যে, উত্পাদন হইলেও তাহা ক্রয়ের জন্য পর্যাপ্ত ক্রেতা নাই। ক্রেতা সৃষ্টি হওয়া দূরের কথা, অধিকন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাইতেছে জ্যামিতিক হারে। 

একদিকে শিল্পের কাঁচামালের মূল্য লাফাইয়া বাড়িতেছে, বাড়িতেছে ফ্রেইট রেট, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীলতার মাত্রা অতিক্রম করিতেছে। ফলে যে কোনো উত্পাদনই এখন লোকসানের ঝুঁকিতে পড়িয়াছে। এই ভয়াবহ অবস্থা চলিতে থাকিলে কলকারখানা বন্ধ হইয়া যাইবে। বিশেষ করিয়া আমাদের মতো দুর্বল অর্থনীতির দেশ খুব অধিক সময় আর সামাল দিতে পারিবে বলিয়া ভাবার কোনো কারণ নাই। এমনিতেই গত দুই বত্সরে দেশব্যাপী ছোটবড় অনেক প্রতিষ্ঠান সংকুচিত হইয়াছে, এমনকি বন্ধও হইয়া গিয়াছে। 

এখন সামনের দিনে আরো আঘাত সহ্য করিবার মতো অবস্থা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, উত্পাদনমুখী প্রতিষ্ঠান হারাইয়া ফেলিবে এতে কোনো সন্দেহ নাই। ফলে একদিকে যেমন বেকারত্ব বাড়িবে, তেমনি মানুষের জীবন পড়িবে হুমকির মধ্যে। এমন পরিবেশ সৃষ্টি হইলে নৈরাজ্য অবশ্যম্ভাবী হইয়া উঠা অস্বাভাবিক নহে। এবং অবস্থাদৃষ্টে ইহাই ভবিতব্য বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। বিশ্বের বড় বড় অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য বিশারদ কোনো আশার কথা শুনাইতে পারিতেছেন না, বরং অশনিসংকেত দিয়া যাইতেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি বলিয়াছেন, ‘ওয়েট অ্যান্ড সি, অ্যান্ড হোল্ড ব্রিথ।’ অর্থাত্ অপেক্ষা করো, দেখ এবং দম আটকাইয়া থাকো। আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ভালো। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান হইতে অর্থনীতিতে আশার আলো দেখিতে পাইতেছে। কিন্তু উহা খাতা-কলমের সত্য বলিয়াই প্রতীয়মান হইতেছে। অর্থনীতির বড় একটি বিষয় হইল মূল্যস্ফীতি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে এই মূল্যস্ফীতি সামাল দেওয়া কঠিন হইয়া পড়িবে। বিশ্বের ধনী দেশগুলিতেও কিছু মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়াছে। 

ধনী দেশগুলি বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা দিয়া বাজার সচল রাখিতে চেষ্টা করিতেছে। তাহাদের সেই সক্ষমতা আরো অনেক দিন ধরিয়া রাখিতে পারিবে হয়তো। কিন্তু সেই সক্ষমতা আমাদের নাই। ঋণসহায়তা দিয়াও খানিকটা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করিয়াছে সরকার। কিন্তু সেই ঋণ যদি বোঝা হইয়া দেখা দেয়, তাহা হইলে অদূর ভবিষ্যতে ফলাফল ভালোর বদলে মন্দ হইয়াই আবির্ভূত হইবে। 

মোদ্দা কথা, বাংলাদেশের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একটি চ্যালেঞ্জ হইয়া দেখা দিতে পারে। তথাপি মানুষ আশাবাদী। পরিস্থিতি আজ হউক আর কাল হউক, স্বাভাবিক হইবে তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। হয়তো ভাইরাসের প্যানডেমিক এনডেমিক হইয়া থাকিবে। কিন্তু সময় একটি বড় ব্যাপার। 

ইতিমধ্যে যদি অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভাঙিয়া যায়, ব্যবসায়-বাণিজ্য সংকুচিত হইয়া মুখ থুবড়াইয়া পড়ে, তাহা হইলে সেই পরিস্থিতি হইতে ঘুরিয়া দাঁড়ানো মুশকিল হইয়া যাইবে। সুতরাং এই রকম একটি স্পর্শকাতর সময়ে কোনো ক্ষেত্রেই ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত যাহাতে গৃহীত না হয়, সেই দিকে স্থির দৃষ্টি রাখিতে হইবে। 

ইত্তেফাক/এএএম